প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পর প্রথমবারের মতো উদযাপিত হল সিলেটের শতবর্ষের সাংবাদিকতার স্মারক প্রতিষ্ঠান সিলেট প্রেসক্লাব ডে। দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে র্যালী, আলোচনা সভা, কেক কাটা ও র্যাফেল ড্র এর আয়োজন করা হয়। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে সাংবাদিক, কূটনীতিক ছাড়াও পেশাজীবী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যোগ দেন।
শনিবার বিকেল সোয়া ৪টায় সুবিদবাজার-রিকাবীবাজার সড়কে বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে প্রেসক্লাব ডে’ উদযাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ক্লাবে আমিনুর রশীদ চৌধুরী মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন ক্লাব সদস্য লুৎফুর রহমান তোফায়েল ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন শ্যামানন্দ দাস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ গণমাধ্যম। এটি যত সমৃদ্ধ হবে সমাজ ও রাষ্ট্র তত এগিয়ে যাবে। সিলেট প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও দীর্ঘ ৫৪ বছর পর আজকের এই দিনে দিবস উদযাপনের এই আয়োজন সাংবাদিকতা ও সিলেটের ইতিহাসের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা এর সাক্ষী হয়ে থাকলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তি বলেন, আজকের এই উদ্যোগ চমৎকার। সিলেটের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবর্তী কয়েকটি রাজ্যের সংযোগ রয়েছে। সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে আমরা কাজ করে যাব।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট এবং দেশের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে প্রেসক্লাবের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রেসক্লাব ডে উদযাপনের আয়োজনকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সিলেট প্রেসক্লাব একটি ইতিহাস। আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। যুগ যুগ ধরে সিলেট প্রেসক্লাব রাষ্ট্র ও মানুষের স্বার্থে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সিলেট প্রেসক্লাবের ইতিহাস দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। আজকের দিনটি ইতিহাসের অংশ।
সিলেট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রফিকুর রহমান লজু বলেন, ১৯৬৫ সালের ১৩ জুলাই সিলেট প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। সেই কমিটির একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আজকের দিনটি আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের; যে আবেগ-অনুভূতি হয়তো অন্য সবার মাঝে কাজ করবে না।তিনি বলেন, সিলেট প্রেসক্লাবের জন্ম ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। প্রতিষ্ঠাকালীন বেশিরভাগ সদস্য আজ জীবিত নেই। দীর্ঘ ৫৪বছর পর হলেও ক্লাবের প্রতিষ্ঠাদিবস আয়োজন করেছে বর্তমান কমিটি। এজন্য তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মো. জেদান আল মুসা বলেন, এসএমপি ও সিলেট প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রেসক্লাব ডে পালনের ঐতিহাসিক সময়ে সঙ্গী হতে পেরে আমি আনন্দিত।
কেন্দ্রীয় মুসলীম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস) এর সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী বলেন, আজ সিলেট প্রেসক্লাব দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পেলো। এ উদ্যোগের জন্য বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ। প্রেসক্লাব লাইব্রেরী সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে কেমুসাস পাশে থাকবে।
স্বাগত বক্তব্যে সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বলেন, সিলেট প্রেসক্লাবের ইতিহাস শতবর্ষের। সাংবাদিকতাকে মহিয়ান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৯৬৫ সালের ১৩ জুলাই যুগভেরী সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নিজস্ব জমি ও ভবন নিয়ে প্রেসক্লাব সুসংগঠিত হলেও প্রতিষ্ঠাদিবস নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো যায়নি।তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ৫৪ বছর থেকে প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রেসক্লাবের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করব। এজন্য প্রেসক্লাব ফেলোশিপ চালু করেছি। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে বর্তমানে জীবিত প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক সকলের ঐক্যমতে ভিত্তিতে ১৩ জুলাইকে প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে ইকরামুল কবির বলেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক দিন। সাংবাদিকতার ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হবে।
ক্লাবের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক নূর আহমদ এবং পাঠাগার সম্পাদক খালেদ আহমদের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল কবির, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এনামুল হক জুবের, সহ-সভাপতি এমএ হান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। এসময় প্রেসক্লাবের সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক চৌধুরী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো: ফয়ছল আলম, শুয়াইবুল ইসলামসহ ক্লাব সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন।
পরে প্রেসক্লাব ডে উদযাপন উপলক্ষে কেক কাটা হয় এবং র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা টিকিট বিজয়ী হন ক্লাবের সিনিয়র সদস্য ফারুক আহমদ।
টিকিটটি স্পন্সর করে বাংলাদেশের বৃহৎ অনলাইন বুকিং পোর্টাল ও ট্রাভেল টেকনোলজি কোম্পানী হালট্রিপ ডটকম। র্যাফেল ড্র বিজয়ীকে টিকিট তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির এরিয়া সেলস ম্যানেজার সেলিম আল রাজী।