নিউজ ডেস্কঃ নানা বিতর্কে রীতিমতো জেরবার সিলেট জেলা বিএনপি। বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষতো পুরানো খবর। সর্বশেষ বিতর্ক কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে। প্রস্তুতি শেষে যখন সবাই কাউন্সিল শুরুর অপেক্ষায় তখন হঠাৎ করে মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণা আসে কেন্দ্র থেকে।
এরপর আবারও ভোটার তালিকায় কোন অনিয়ম হয়েছে কি না তা যাচাই করতে কেন্দ্র থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। সেই কমিটি তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থগিত হওয়া কাউন্সিল কবে হতে পারে- এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা থাকলেও এ মাসের শেষের দিকেই তা হতে পারে- এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।
মোটামুটি এমনসব বিষয় আশয় নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপি বর্তমানে একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার দীর্ঘশ্বাস আরও ভারী থেকে ভারীই হচ্ছে।এবারের কাউন্সিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সভাপতি পদে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করলে সিলেট জেলা বিএনপির একটি বড় অংশ হতাশায় ভেঙে পড়েন।
বিশেষ করে আরিফ বলয়ের বাইরের নেতাকর্মীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল এমন খবরে। তাদের কষা ছকে এগুনো সম্ভব হবেনা- এমনটা ভেবে তারা হতাশার অন্ধকারে হাবুডুবু খেতে থাকেন। নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে বিশেষ মহলটি কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বলেও জানায় নির্ভরযোগ্য সূত্র। সূত্রটির মতে, আরিফকে নির্বাচন থেকে নিবৃত্ত করতে ওই মহলটি জোর লবিং গ্রুপিং শুরু করেন।এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার ( ২২ মার্চ ) দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়ে দেন যে, তিনি আর সভাপতি পদপ্রার্থী নয়। প্রতিদ্ব›দ্বীতা থেকে সরে গেছেন।কারণ, হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিসিক মেয়র জানান, তার চিন্তা চেতনায় দল। দলীয় স্বার্থে দলের হাই কমান্ড যে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি তা মেনে নিয়ে কাউন্সিলে সভাপতি পদে আর নির্বাচন করছেন না।
আরিফের এমন সিদ্ধান্ত জানার পর তার ভক্ত অনুরাগীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। তাদের মতে, যে তিনজন সভাপতি পদের প্রার্থী ছিলেন, তাদের মধ্যে যোগ্যতায় এগিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী। অথচ দলের হাই কমান্ড তাকেই নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিলেন!এতে অবশ্য আরিফ বলয়ের বাইরের নেতাকর্মীরা স্বস্তি অনুভব করছেন। কেউ কেউ অনেক বড় পথের কাঁটা দূর হয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন।আর নিরপেক্ষদের মতে, তারা এমন একজনকে সভাপতি হিসাবে পেতে চাচ্ছেন, যাকে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সামনের কাতারে পাওয়া যাবে। আরিফুল হক চৌধুরীসহ তিন সভাপতি প্রার্থীর যে কাউকে দলীয় কাউন্সিলররা বেছে নিতেন। কিন্তু এখন তাদের পছন্দের ক্ষেত্রটা সীমিত হয়ে গেল। মানে, দু’জনের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে তাদের।
এই মহলটির মতে, আরিফুল হক চৌধুরী হঠাৎ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে প্রতিদ্বদ্বীতার ঘোষণা দিয়ে দলটির কিছু কিছু নেতাকর্মীকে অস্বস্তির আগুনে পোড়ালেও শেষ পর্যন্ত তাদেরই জয় হলো। কেন্দ্রের নির্দেশে বা চাপে তিনি সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ অবস্থায় আগামীতে জেলা বিএনপির শীর্ষ পদে যে আসবেন তাকেই নিয়েই এগুতে হবে তাদের। তবে তখন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না, তার উত্তরও খুঁজতে শুরু করেছেন সচেতন নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির জন্য স্বস্তির আরও খবর আছে। অন্যতম সভাপতি পদপ্রার্থী আবুল কাহের চৌধুরী শামীম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বুধবার বিকেলে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মানে, বিরোধ নয়, শান্তি। অন্তত এ দু’ বলয়ের নেতাকর্মীরা এমন খবরে আরেকটু স্বস্তিতেই নিঃশ্বাস ফেলছেন নিশ্চয়।