এ প্রাণহানি ও ক্ষতি কমাতে আগে থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাব্য এলাকা ও সময় চিহ্নিত করার মডেল উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই তরুণ বিজ্ঞানী। আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পাপ্পু পাল এবং গবেষণা সহকারী ও সাবেক শিক্ষার্থী খান মো. গোলাম রব্বানীর উদ্ভাবিত এই মডেলে ২৪ ঘণ্টা আগেই বজ্রপাতের ঝুঁকির তথ্য পাওয়া যাবে।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ‘আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড আর্লি অ্যাকশন :লাইটেনিং ডাইজেস্টার’ শীর্ষক সেমিনারে এ গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়।

বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক তৌহিদা রশীদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক ও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রেজাউল হক। অনলাইনে যুক্ত হন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিনিধি ড. লক্ষণ সিং রাঠোড়। এ ছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে ঢাবির আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে গবেষণা ফল উপস্থাপন করেন খান মো. গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের অনুসরণে গাণিতিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ব্যবহার করে বজ্রপাতের পূর্বাভাস পাওয়ার এই মডেল উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণায় পরীক্ষামূলকভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, এই মডেল ব্যবহার করে বজ্রপাত হওয়ার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগেই বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলের জন্য পূর্বাভাস তৈরি করা সম্ভব। এই পূর্বাভাস ৮০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত সাম্প্রতিক পাঁচটি বজ্রপাতের ঘটনা বিশ্নেষণ করে এই গবেষণায় সাফল্য পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।

ওয়েদার রিসার্চ ফোরকাস্টিং (ডব্লিউআরএফ) মডেলের বিষয়ে তরুণ এই বিজ্ঞানী আরও জানান, দেশে বজ্র-ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি বা উপায় জানা ছিল না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য অনুযায়ী, বজ্র-ঝড়ের চেয়ে বজ্রপাতে ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। তাই আমরা বজ্রপাত নিয়ে কাজ করা শুরু করি।

প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতসহ সব দুর্যোগে মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ জন্য যা করা দরকার আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২৩ সালের মধ্যে দুর্যোগে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনা।

প্রকাশিত গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, এই মডেল বাস্তবায়নে যে কোনো ধরনের আর্থিক ও নৈতিক সমর্থন দিতে সরকার প্রস্তুত। তবে শুধু পূর্বাভাস দিলেই চলবে না। এই সংকেত দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে।