সামনে আসন্ন (১২ আগষ্ট) পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবাণীর ঈদ। এই ঈদে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা অল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানী করে থাকেন। কোরবাণীর পূর্বে পশুকে অবশ্যই সুস্থ সবল হতে হবে। আসুন জেনে নেই, সুস্থ সবল কোরবাণীর পশু কিভাবে চিনবেন-
মোটা গরু মানেই কিন্তু সুস্থ গরু নয়। কোরবানীর গরু কেনার সময় অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিবেন, যিনি সুস্থ গরু দেখে চিনতে পারেন। এক্ষেত্রে গরুর বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। সাধারণত এটা আমরা দাঁত দেখে বুঝতে পারি। ছাগলের ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক বছর বয়স হতে হবে। উটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। কোরবানির পশু ক্রয়ে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে, তা হলো-
১। পশু সর্বদাই লেজ নাড়িয়ে মশা-মাছি তাড়াতে ব্যস্ত থাকবে ও কিছুক্ষণ পর পর নড়াচড়া করবে।
২। খাবার দিলে তা স্বাভাবিকভাবে খাবে ও অবসর সময়ে জাবর কাটবে।
৩। চোখ বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে।
৪। নাকের নিচের কালো অংশ (মাজল) ভেজা ভেজা থাকবে, মনে হবে যেন ফোঁটা ফোঁটা শিশির জমেছে।
৫। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে, অস্বস্থিতে ছটফট করবে না।
৬। গরু-মহিষের ক্ষেত্রে বয়স দুই বছরের বেশি এবং ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি হতে হবে।
৭। সম্ভব হলে পশুর প্রস্রাব ও গোবর স্বাভাবিক কি না তা যাচাই করতে হবে।
৮। গর্ভবতী পশু কোরবানি দেওয়া যায় না। তাই কেনার আগে সেটা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
৯। সুস্থ পশুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়, তাই এটি দেখে নিতে হবে।
১০। গরু কিনতে চাইলে দেশীয় গরু কিনতে চেষ্টা করুন। কারণ সীমান্ত পার হয়ে আসা গরুগুলো অনেক দূর থেকে আসে বলে ক্লান্ত হয়। অনেক সময় সেগুলো ছোট-খাট আঘাতপ্রাপ্তও হয়। আর দুর্বল গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ সেটা বোঝা বেশ কষ্টকর।
১১। পশু কেনার আগে এর শরীরের কোথাও ক্ষত আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন।
অসুস্থ পশু চেনার উপায় :
১. পশু ভালোভাবে খেতে চায় না।
২. হেলেদুলে এবং ধীরে চলে।
৩. রোদে কম থাকতে চায়, ধীরে ধীরে ছায়া খোঁজে।
আজকাল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অল্প সময়ে বেশি অর্থ লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে পশু বিশেষত গরু মোটাতাজা করে বাজারজাত করছেন। কৃত্রিম উপায়ে (বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে) মোটাতাজাকৃত পশুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হাটের যে চকচকে চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে সেই গরুটিকেই সম্ভবত ট্যাবলেট প্রয়োগ করা হয়েছে। মানুষের শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচকে দেখায়, ট্যাবলেট খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা হলে তেমনি চকচকে দেখায়। এ উপায়ে মোটাতাজা করা পশু অনেক সময় ঈদের আগেই অসুস্থ হয়ে কুরবানির অযোগ্য হয়ে পড়ে, কিছু পশু মারাও যায়।
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকৃত পশু চেনার উপায়:
১. মোটাতাজা করার ওষুধ দিলে পশুর শরীরে পানি জমে ফুলে ওঠে এবং পানির উপস্থিতি সহজে টের পাওয়া যায়।
২. পানির প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে।
৩. লেজ দিয়ে মাছি তাড়াতে দেখা যায় না।
৪. খাবার তুলনামূলকভাবে কম খায়।
৫. আঙুল দিয়ে পশুর শরীরের মাংসালো অংশে চাপ দিলে শরীর দেবে যায়। সুস্থ গরুর রানের মাংস থাকবে শক্ত এবং ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ক্ষেত্রে তা নরম হয়।
৬. পশু এক জায়গায় বসে থাকে, নড়াচড়া কম করে।
৭. এই ধরনের গরুর প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যায়।
৮. মুখে অতিরিক্ত লালা বা ফেনা থাকে
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজা করতে ৪-৫ মাস সময়ের প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে ইউরিয়া, চিটাগুড়, খড় মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। তাই গরুর স্বাভাবিক উশকোখুশকো চেহারা, চামড়ার উপর দিয়ে পাঁজরের কয়েকটা হাড় বোঝা যাচ্ছে এমনটা দেখেই কেনা উচিত।