আজকেও করোনায় প্রান হারালেন আরেকজন পুলিশ সদস্য। এনিয়ে গত কদিনে ৪ জন পুলিশ সদস্য করোনায় মৃত্যুবরন করলেন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৯ জনসহ পুলিশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৫। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জেই র্যাব-পুলিশের ৮২জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে বিএমএ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দেশে ৮৮১ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে সাভারে গত ২৪ ঘন্টায় ৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৭ জনই হচ্ছে গার্মেন্টস কর্মী। ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩টিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশের এই মহাসংকটে পুলিশ কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়াই করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় কাজ করছে। সাধারন মানুষের সুরক্ষায় জেনেশুনেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছে মাঠে দায়িত্বরত পুলিশ। অথচ তাদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ কোন বরাদ্দ এখনও দেয়া হয়নি। পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নেই যতটা সম্ভব জোড়াতালি দিয়ে কিছু সুরক্ষা সামগ্রী মাঠে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। হান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও সাবান প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে দেয়া সম্ভব হলেও পিপিই সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ এসব পুরোটাই পুলিশের নিজস্ব তহবিল থেকে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। আর যেখানে চিকিৎসক এবং নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীরাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর প্রকট সংকটে রয়েছে, সেখানে পুলিশকে দিবে কিভাবে? যার ফলে, দেখা গেছে করোনায় প্রান হারানো রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় ডিউটিরত রাজারবাগ ব্যারাকের কনস্টেবল আরিফ ও ধীরেন্দ্রনাথ মাস্ক ও গ্লাভস ছাড়াই ডিউটি পালন করতে।
একদিকে আমরা গার্মেন্টস খুলে দিয়ে শ্রমিকদের চাকরী রক্ষায় বাধ্য করে গণহারে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে ঢাকায় ঢুকাচ্ছি। অন্যদিকে ইফতারির বাজার খুলে দিয়ে লকডাউনের বারোটা বাজাচ্ছি। এখন আবার শুনছি, কদিন পরে বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানও নাকি খুলে দেয়া হবে। আপনারা আল-কায়েদা এবং আইএসের মত ভিডিও ফুটেজ দিয়ে জনগণকে লকডাউন মানার বিভিন্ন সবক দিয়ে যাচ্ছেন। আর অন্যদিকে সবকিছু খুলে দিয়ে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতের সব দায়িত্বটা তুলে দিচ্ছেন মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকা অরক্ষিত পুলিশের কাধে! পারলে ভিডিও ফুটেজে নির্দেশ না দিয়ে মহামান্য, মাননীয় ও মহোদয়গনরা পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির মত মাঠে নামুন। অযথা কেন ডাক্তার, পুলিশ আর গার্মেন্টস কর্মীদের জীবনকে হুমকিতে ফেলছেন। পরিস্কার করে বলে দিন, হয় পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর করবেন। না হয় লকডাউন তুলে দিবেন। আপনারা রাজা-বাদশারা নিরাপদে ঘরে বসে বসে হুকুম দিবেন, আর মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকা অরক্ষিত ডাক্তার-পুলিশরা আকাতরে জীবন বিলিয়ে দিবে!
এই পুলিশরা নিজেরা শখ করে লকডাউন ভেংগে ঘর থেকে বের হয়নি। তারা জেনেশুনেই সাধারন মানুষের সুরক্ষায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অরক্ষিত অবস্থায় নিজেদের জীবনটাকে বিলিয়ে দিয়ে গেলেন। এই মৃত্যুর দায়টা কি কখনও কেউ নিবেন?
ডক্টর তুহিন মালিক
আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ