নিউজ ডেস্ক:-
মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কমান্ডার এএসপি মো. শামীম আনোয়ার হোসেন। করোনা ঝড়ে যখন মানব সভ্যতা বিশ্বব্যাপী কম্পমান, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাঝে যখন করোনা আতঙ্ক, নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবাই যখন ঘরমুখী তখন কে রাখে কার খবর। আর এ অবস্থার মাঝেও মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এএসপি মো. শামীম আনোয়ার হোসেন।
সারাদেশের যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয় তখন শ্রীমঙ্গল র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন ঘোষণা দেন যে শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ এলাকায় কোন গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালীন জটিলতা নিয়ে যানবাহনের সমস্যা হলে উনার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে ফোন করার জন্য। তাহলে তিনি নিজ দায়িত্বে সেই গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করবেন।
রোববার (২৬ এপ্রিল) রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার দক্ষিণ উত্তরসূর এলাকা থেকে এক গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালীন ব্যথায় যখন কাতর হয়ে পড়েন মহিলাটি। অনেক দৌড়াদৌড়ি করেও যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি উপায় না পেয়ে তখন ফোন করেন শ্রীমঙ্গল র্যাব-৯ এর কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেনকে। ফোন পেয়ে তিনি নিজেই তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যান।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষ যখন সচেতন থাকার জন্য একজন অন্যের কাছ থেকে নুন্যতম তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখছেন ঠিক এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ওই গর্ভবতী মাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে যান শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পর ভূমিষ্ট হয় একপুত্র সন্তান। বর্তমানে মা ও নবজাতক ছেলে উভয়েই সুস্থ আছেন।
র্যাব কমান্ডার শামীম আনোয়ার হোসেনের এমন মানবিকতায় সত্যিই অবাক সেই দক্ষিণ উত্তসুর এলাকার মানুষ। এ ঘটনা নিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে ওই প্রসূতি মায়ের ভাইপো তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন।
যা নিচে পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো :
”শ্রীমঙ্গল র্যাবকে ভগবান অনেক বড় পুরুষ্কার দেক!
গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে এগারটা। আমার পিসির প্রসব বেদনা ওঠে। রক্ত ভাঙা শুরু হয়। কিন্তু বাচ্চা প্রসব হইতেছিল না। তাই সবাই বল হসপিটালে নেওয়াই লাগবে। হসপিটালে নেওয়ার জন্য এত রাতে গাড়ি কোথায় পাব- চিন্তায় আমরা সবায় টেনসন করতেছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি পাই নাই। পরিচিত অনেক সিএনজি ডাইবারকে অনুরোধ করেও লাভ হয় নাই। তারা বলে এত রাতে যাইতে পারবে না। এমন সময় আমার প্রিয় বড় ভাই রাজু (উপজিলা চেয়ারম্যানের ছেলে) ভাই আমাকে শ্রীমঙ্গল র্যাব কমান্ডার, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামিম ছারের নাম্বার দেয়। তিনি নাকি এরকম সব মানুষকে সাহায্য করেন। প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। তবুও কল দিলাম। ওনি বললেন ২ মিনিটের মধ্যে রওনা হইতেছেন। বিশ্বাস করি নাই। পরে দেখি ওনি ঠিক সময়মতো তারাতারি আসছেন।
আমরা আরো আসচর্য হইলাম, পিসির হাটার অবস্থা ছিল না। ওনি মুখে কিছু না বলে পিসিকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে তুলল। হাসপাতালে পৌছার পর রুগিকে কোলে নিয়ে আবার একবারে অপারেশন রুমে দিয়া আসছে।
আমার আসচর্য হইলাম, এই রুকম মানুষও কি পৃথিবীতে আছে!
(আমার পিসির গর্ভ থেকে ভাই হইছে, দুইজনই সুস্থ আছে। সবার আশীর্বাদ চাই)”