নিউজ ডেস্ক:-
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কিট উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল ও অন্যান্য গবেঘকদের, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে র্যাপিড টেষ্টিং কিটটি তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ করেছেন। এমন ভালো লাগার খবর সচরাচর আমাদের দেশে আমরা খুব একটা পাই না।
হেলথ ডায়াগনোসিস সেক্টরে র্যাপিড টেষ্টিং কিট নিয়ে গবেষণা আমাদের দেশে খুব বেশি হয় না। জানা মতে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস ও আইসিডিডিআরবি’র, আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বিজ্ঞানি ড. ফেরদৌসী কাদরী যৌথভাবে প্রথম শুরু করে এবং সফলভাবে কলেরা নির্ণয়ের জন্য কলকিট বাজারজাত করে। সৌভাগ্যক্রমে সেই টিমের ছোট একটা অংশ ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায়, একটু বড় পরিসরে র্যাপিড টেষ্টিং কিটগুলোর মান উন্নয়নের জন্য এখনো কাজ করছি।
যে কোন নতুন কিছুর কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেখানে ব্যবহার করা হয় সেই জায়গায় কেমন কাজ করবে তার জন্য কিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষার দরকার হয়। এবং এটা হতে হবে একই রকম জায়গায়, একই রকম পারিপার্শ্বিক অবস্থায়। এটা ফিল্ড ট্রায়াল বা মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখানে সন্তোষজনক ফলাফল আসলে ধরে নেই এটি ঠিক আছে এবং অন্যান্য জায়গায় কাজ করবে। আর ফলাফল সন্তোষজনক না হলে, কিটের ডিজাইন পরিবর্তন করতে হতে পারে। এটা অনেকটা একভাবে ভূল হলে অন্যভাবে কর, আবার সেভাবে না হলে, ভিন্নভাবে দেখা। এটা খুবই সাধারণ ঘটনা এই কিটগুলো উন্নয়নের জন্য।
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের এই উদ্ভাবিত কিটটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে-
১.
এটির এখনো মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা- নিরীক্ষা হয় নি। শুধু গবেষণাগরেই টেষ্ট করা হয়েছে। যেহেতু এখন কিটগুলো দিয়ে মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা- নিরীক্ষা হবে, তাই ভাগ্য ভালো হলে প্রথমবারেই ভালো কাজ করবে। আর না হলে আরও সময় লাগতে পারে ভালো মানের কিট বাজারে দিতে। তবে এ জাতীয় কিট যেহেতু অন্যান্য দেশে কাজ করতেছে, তাই এই কিটও আজ অথবা কাল কাজ করবে। সরকারের যথাযথ সহযোগিতায় বাজারেও আসবে। আমরা আশাবাদী হতেই পারি।
২.
এটি এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজেন ডিটেকশন টেষ্ট। যদিও আগে শুধু এ্যান্টিবডি টেষ্টিংয়ের কথা ছিল। এখন দু’টাই করার ফলে কিটটি ভালো কাজ করার কথা। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এই এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজেন টেষ্টের কোনটাকেই তাদের মানের গ্রহণযোগ্য মনে করে না। তবে তারা র্যাপিড এ্যান্টিজেন টেষ্টিং কিটটির ব্যাপারে আশাবাদী। তারা মনে করে ভালোভাবে উন্নয়ন ঘটালে হয়তো এ্যান্টিজেন ডিটেকশন টেষ্টটি নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, আমেরিকাসহ অনেক দেশে এখন করোনা ভাইরাস ডিটেকশনে এ্যান্টিবডি টেষ্টিং কিট ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমরা জানি সকল কিছুরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। এটিরও থাকবে, খুবই স্বাভাবিক। তবে দেখার বিষয় কতটুকু সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে পারেন ড. বিজন কুমার শীল ও তাঁর দল।
একটি কথা র্যাপিড টেষ্টিং কিটের ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজ্য। যতই আমরা ভালো মানের কিট তৈরি করি না কেন, এটি কিন্তু ল্যবরেটরি টেষ্টিংয়ের বিকল্প না। এই কিটগুলো অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, কারণ: খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়, দাম কম, যন্ত্রপাতির ব্যবহার কম, টেষ্টিং খুবই সহজ, টেষ্টিংযের জন্য ভালোমানের ল্যাবরেটরির দরকার হয় না (তবে করোনাভাইরাস নির্ণয়নে লাগবে)।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক থাকলেও এটাকে আমরা দল, মত নির্বিশেষে সাধুবাদ জানাতে পারি। এটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে তবে তা হোক গঠনমূলক। বিতর্ক যেন সমালোচনায় এবং সেখান থেকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়।
আমেরিকা, কানাডাসহ বড় বড় সব রাষ্ট্র ঝুকি নেয় বলেই তো সফল হয়। আমরাও চেষ্টা করি, আমরাও ঝুকি নিতে পারি। নতুন কিছু করা মানেই তো ঝুকি নেওয়া। আমরা ক’জন আছি যে ঝুকি নিতে চাই?
*লেখক: পিএইচডি ক্যান্ডিডেট, ইউনিভার্সিটি অব নিউব্রান্সউইক, ফ্রেডেরিক্টন, কানাডা।