নিউজ ডেস্ক:-
দেশে গত ৮ মার্চ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৫ হাজার ৪১৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যেমাত্র ২.২৬ শতাংশ বা ১২২ জন রোগী সেরে উঠছেন। সেরে ওঠার দিক থেকে যা এখনও পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়, আক্রান্তদের সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা, কম ফলো-আপ পরীক্ষা, বয়স্ক এবং অন্য ব্যক্তিদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা এবং চিকিত্সা খাতের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সেরে ওঠার হার কম হওয়ায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগে।
তারা আরও বলেন, কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হতে ধরাবাঁধা কোনো সময় নেই। আক্রান্তের লক্ষণগুলোর মাত্রা, বয়স এবং রোগীর অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে তাদের সেরে উঠতে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় ভালো অবস্থানে আছে, কারণ এখানে বেশিরভাগ রোগীর মধ্যে দেখা দেয়া লক্ষণগুলো হালকা ধরনের।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তদের সেরে ওঠার হার প্রায় ২৮.৫৩ শতাংশ ছিল। যার মধ্যে সিঙ্গাপুরে এটি ৭.৮৯ শতাংশ, ভারতে ২২.০৪ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১.৭৩ শতাংশ, স্পেনে ৪২.৭৭ শতাংশ, ইতালিতে ৩২.৩১ শতাংশ, ফ্রান্সে ২৭.৬২ শতাংশ, জার্মানিতে ৭০.৬৫ শতাংশ এবং উৎপত্তিস্থল চীনে ৯৩.৪ শতাংশ।
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেরে ওঠার হার কম হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো এ ক্ষেত্রে থাকা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, সাধারণত হালকা করোনার লক্ষণ রয়েছে এমন লোকদের দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে আর মারাত্মক লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের পুরোপুরি সেরে উঠতে সর্বোচ্চ ছয় সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। তবে, যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের হালকা লক্ষণ থাকলেও সেরে উঠতে বেশি সময় লাগতে পারে।
ফ্লোরা বলেন, যেসব করোনার রোগীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের কঠোরভাবে সেলফ আইসোলেশন, স্বাস্থ্যবিধি এবং চিকিত্সকদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেরে ওঠার সঙ্গে তাদের বয়স, আগে থেকে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ফলো-আপ পরীক্ষা এবং সঠিক যত্ন নেয়ার মতো আরও অনেক বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, তরুণদের যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারা ১৪ দিনের মধ্যে এমনকি আরও দ্রুত সেরে উঠতে পারেন। তবে, একাধিক শারীরিক সমস্যা থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের সেরে উঠতে বেশি সময় লাগতে পারে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, অনেক রোগী পাঁচ-সাত দিন পরেই ভালো অনুভব করতে পারেন। তবে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা শুধুমাত্র ভালো অনুভব করার ওপরই নির্ভর করে না, প্রক্রিয়াটি আরও জটিল।