নিজস্ব প্রতিবেদক:-
১৬ এপ্রিল সিলেটে ২ করোনা রোগী সনাক্তের সিলেটে নতুন করে সনাক্ত হলেন আরো ১ জন। এই নিয়ে সিলেটে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ জন দাঁড়ালেও সিলেট বিভাগে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৯ জনে। এর মধ্যে সিলেট ও মৌলভীবাজারে মারা যান দুইজন ।
১৯ এপ্রিল সিলেট ওসমানী হাসপাতালে স্থাপিত ল্যাবে ২৭ জনের নমুন পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৬ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও ১ জনের রিপোর্ট আসে পজেটিভ। করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ি সদর উপজেলার খাদিমনগরের টিকরপাড়া গ্রামে। পেশায় তিনি একজন টমটম চালক। বর্তমানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছে।
চলতি মাসের ৪ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগের ৪ জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে দুই জন মারা গেলেও চিকিৎসাধীন আরো ৭ জন। জীবিত থাকা করোনা আক্রান্ত ৭ জনের মধ্যে ২ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ। এর মধ্যে সিলেটের ৩ জন, সুনামগঞ্জের ৩ জন ও হবিগঞ্জের একজন। সুনামগঞ্জে আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে দুইজনই নারী এবং অপরজন পুরুষ। করোনা আক্রান্ত সুনামগঞ্জের একমাত্র পুরুষ ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে পালিয়ে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। পরে ওই ব্যক্তিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
সিলেট অঞ্চলে করোনা রোগীর তালিকা বাড়তে থাকলেও এনিয়ে অসচেতনতাকে দায়ী করেছেন। জনগণের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নির্বাহী কর্মকর্তা সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন অনেকেই। বিশেষ করে সুনামগঞ্জে প্রথম আক্রান্ত করোনা রোগীর স্বামী নারায়নগঞ্জ থেকে ফেরত আসার কথা বলা হলেও ওই বাড়িতে বিপজ্জনক লাল নিশান টাঙ্গানো হয়নি। তাছাড়া, বাহির থেকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারীদের নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টির তদারকি করা হয়নি-এমন অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া, এক শ্রেণীর জনগণের মধ্যে সংক্রমন বিষয়ে প্রচুর উদাসীনতাও লক্ষ্য করা গেছে। লক ডাউনের নীতিও লঙ্ঘন করছেন এক শ্রেণীর লোকজন। ফলে সিলেট অঞ্চল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী জনপ্রিয় মেডিসিন চিকিৎসক ডা. মইন উদ্দিন। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সহকারি অধ্যাপক। ৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে ওই চিকিৎসকের রিপোর্ট আসে পজেটিভ। পরবর্তীতে ৭ এপ্রিল সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয় ওই চিকিৎসককে। এরপর ৮ এপ্রিল তিনি ঢাকার কুর্মিটুলা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চিকিৎসার জন্য সিলেট ত্যাগ করেন। এরপর ১৫ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর ডা. মইন উদ্দিনের লাশ সংক্রমন বিধি অনুযায়ী গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
এর আগে ৪ এপ্রিল শনিবার করোনার উপসর্গ নিয়ে মৌলভীবাজারে মৃত্যুবরণ করেন এক মুদি দোকানী। ৫ এপ্রিল রোববার মৃত ব্যক্তির পরীক্ষার রিপোর্ট আসে পজেটিভ। অর্থাৎ ওই মুদি দোকানী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। মৃত ব্যক্তির বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামে । বিষয়টি ওইদিন নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদ আহমদ।
এরপর ১১ এপ্রিল হবিগঞ্জে নারায়নগঞ্জ ফেরত একজন পোশাক শ্রমিক সনাক্ত হন করোনা রোগে। ওই ব্যক্তিই হবিগঞ্জের প্রথম করোনারোগী হিসেবে সনাক্ত। (১১ এপ্রিল) সকালে আসা রিপোর্টে হবিগঞ্জে এই রোগীর শরীরে করোনা ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। । ৯ ও ১০ এপ্রিল আক্রান্ত ব্যক্তি হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ছিলেন। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা । তিনি বর্তমানে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন কেএম মুস্তাফিজুর রহমান।
সুনামগঞ্জে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন একজন নারী। রোববার (১২ এপ্রিল) সকালে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ওই নারীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে । আক্রান্ত মহিলার বাড়ি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে। আক্রান্ত মহিলার স্বামী সৌদি থেকে সম্প্রতি দেশে আসেন। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন বলেন, আক্রান্তের পর পরই বাড়িটি লকডাউন করা হয়।
১৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জে আরো এক নারীর করোনা রিপোর্ট আসে পজেটিভ। তিনি ৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গর্ভবতী অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে রক্ত স্বল্পতায় ওইদিন রাতেই আক্রান্ত মহিলাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১২ এপ্রিল ওই মহিলার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে ওই মহিলার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং ১৩ রিপোর্ট পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসলে তিনি সুনামগঞ্জে আক্রান্ত ২য় করোনা রোগী হিসেবে চিহ্নিত হন। আক্রান্ত মহিলার বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বেরীগাও গ্রামে। ওই মহিলার স্বামী ২০ দিন আগে নারায়নগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসেন বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন।
১৩ এপ্রিল রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসেন সুনামগঞ্জের আরো একজন করোনা রোগী। ওই রোগীর বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর উপজেলার পুরাণগাঁও গ্রামে। খবর পেয়ে বুধবার (১৫ এপ্রিল) ওই রোগীকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত রোগীকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ রোগী আটকের বিষয়টি ওইদিন নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, করোনা আক্রান্ত ওই রোগী গত ১৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ আসলে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টায় সাধারণ ঢাকা ফেরত মনে করে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু আজ আইইডিসিআর থেকে এ রোগীর নাম ঠিকানা সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিনকে জানানো হয়। পরে খোঁজ নিয়ে ওই রোগীর ঢাকা থেকে পালিয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি। পরে সিভিল সার্জন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং সুনামগঞ্জ থেকে করোনা রোগীর জন্য ডেডিকেটেড অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ করেন। পরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় থানা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ওই ব্যক্তিকে পুর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি পালন পূর্বক সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে, সিলেটে ডা. মঈন উদ্দিনের পর ১৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সিলেট আক্রান্ত হলেন আরো ২ ব্যক্তি। আক্রান্ত দুই জনই ঢাকা ফেরত। তাদের মধ্যে একজন পেশায় ট্রাক চালক। ঢাকা ও নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তিনি ট্রাক নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। তাঁর বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সরুফদ গ্রামে। ১২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে এলাকায় আসার পর তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। অপরজন গোয়াইনঘাট উপজেলার ৮নং তোয়াকুল ইউনিয়নের বীর কুলিগ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার মিরপুরে একটি রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি ছিলেন। সেখান থেকে কয়েকদিন পূর্বে বাড়িতে আসলে তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।