Voice of SYLHET | logo

১৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১লা অক্টোবর, ২০২৩ ইং

সিলেটে ১৮ হাজার পরিবহণ শ্রমিকের মানবেতর দিনযাপন

প্রকাশিত : April 18, 2020, 14:03

সিলেটে ১৮ হাজার পরিবহণ শ্রমিকের মানবেতর দিনযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক:-

গাড়ীর চাকা ঘুরলেই চলে পেট। গাড়ি বন্ধ থাকলে করতে হয় মানবেতর জীবনযাপন। করোনা প্রতিরোধে দেশে গণপরিবহন বন্ধের কারণে দৈন্যদশায় জীবন কাটছে সিলেট জেলার প্রায় ১৮ হাজার গণপরিবহন শ্রমিকের। অথচ তাদের দেখার কেউ নেই। পাচ্ছেন না কোন সরকারি সহায়তা। সারা বছর শ্রমিকদের ঘামে মালিকদের অট্টালিকা তৈরি হলেও এমন দুর্যোগে মালিক সমিতিও নীরব। বরং বলছেন দায়সারা কথা। তাইতো ক্ষোভ আর হতাশা শ্রমিকদের মাঝে।
তেমনই একজকন মোহাম্মদ শাহিন আহমদ। পেশায় বাস চালক। সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং-১৪১৮ এর ঢাকাদক্ষিণ-ভাদেশ্বহর সড়কে বাস চালান তিনি। সাধারণ সময়ে বেশ ভালোই চলে তার সংসার। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চোখে যেন অন্ধকার দেখছেন। তাইতো ক্ষোভ আর আক্ষেপ নিয়ে বললেন কষ্টের কথা।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ফোনে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আজ প্রায় ২০ দিন গাড়ি বন্ধ। প্রথমে সপ্তাহদিন কোনরকম চলতে পারলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না৷ শ্রমিক সংঠিন, মালিক সংগঠন, সরকার কেউ আমাদের খোঁজ রাখে না। গিয়েছিলাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান (ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন) এর কাছে। উনি বললেন তোমাদের শ্রমিক সংঠন আছে। তাদেরকে বলো সাহায্য করতে। এখানে যা ত্রাণ আসছে তা দিয়ে দিনমজুর আর হতদরিদ্র যারা তাদের পোষাবে না। আমরা না খেয়ে মরে গেলেও দেখার কেউ নাই।’
আক্ষেপ আর ক্ষোভ কেবল শাহিন আহমদেরই না। এ হতাশা সিলেট জেলার গণপরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সকল শ্রমিকের। কেউবা আবার আছেন ঋণের চাপে। সপ্তাহ কিংবা মাস শেষেই গুনতে হয় ঋণের বড় কিস্তি। এমন পরিস্থিতিতে দিন দিন ছুটি বাড়ায় পরিবহণ শ্রমিকদের মুখের রুটিটাও যেন হারাচ্ছে।
তাদের অভিযোগের আঙ্গুল খোদ শ্রমিক নেতাদের দিকে৷ তাদের মতে শ্রমিক নেতারা নিজেরাও কিছু দিচ্ছেন না আবার শ্রমিকদের হয়ে মালিক সমিতিকেও কিছু বলছেন না।
এনা পরিবহনের চালক মো. মুজিব উদ্দিন এ প্রতিবেদককে অনেকটা হতাশার কন্ঠে জানালেন, ‘প্রথম দিকে আমাদের এনা পরিবহনের পক্ষ থেকে সামান্য সাহায্য পেয়েছিলাম। কিন্তু যা পেয়েছি তা দিয়ে ৩ দিনও চলে না। এরপর আর কেউ কোন সাহায্য করেনি। সরকার, আমাদের শ্রমিক সংগঠন কেউ কোন সাহায্য দিচ্ছে না। এমনকি মালিক সমিতিকেও কিছু বলা হচ্ছে না। আল্লাহ জানেন পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কিন্তু কারো কাছে হাতও পাততে পারছি না।’
জানা গেছে- সিলেট জেলা গণপরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (মাইক্রবাস, মিনি বাস, বাস) রেজি নং-১৪১৮ এর অন্তর্ভুক্ত ৬২টি উপশাখায় মিলে প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার শ্রমিক আছেন যারা ভোটার আর বাকিরা ভোটার নন। যারা ভোটার তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে প্রতি উপশাখায় মাসে সদস্য নবায়ন ও শ্রমিক কল্যাণ ফাণ্ড বাবদ ৪০ টাকা আদায় করে। এর নির্ধারিত একটি অংশ জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে জমা দেন। যার অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার কথা। অথচ বর্তমান সময়ে শ্রমিকদের দৈন্যদশায় এ অর্থও কোন কাজে আসছে না।
অবশ্য সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন ১৪১৮ এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মুহিম শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের ব্যাপারে বলেন, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৬০ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে ফাণ্ডে। শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে কোন শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এছাড়াও কেউ অসুস্থ হলে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে সকল অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হলেও এখন যে টাকা আছে তা দিয়ে শ্রমিকদের কিছুই হবে না। পুরো ৬০ লাখ টাকা ভাগ করে দিলেও জনপ্রতি মাত্র ৬ শত টাকা দেয়া সম্ভব। যা দিয়ে শ্রমিকদের কিছুই হবে না। এমন অবস্থায় মালিক সমিতি ও সরকার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাছাড়া শ্রমিকরা যে টাকা মাসে দেন তার সামান্য পরিমাণ জেলা পায় বাকিটা নিজ নিজ উপশাখায় থেকে যায়। তাই সকল উপশাখাকে শ্রমিকদের সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ৪০টি উপশাখা ইতোমধ্যে তাদের শ্রমিকদের সামান্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী, যেটুকু সম্ভব পেরেছে নগদ অর্থ দিয়েছে৷ বাকি ২২টি উপশাখা এখনো দেয়নি। তবে যে সাহায্য তারা পেয়েছেন তা একদিন ৩ বেলা খাবার যোগাবে বলে আমার মনে হয় না।
শ্রমিক ইউনিয়নের এ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ২০১৪ সালে যখন বিএনপি জামায়াত সরকার টানা হরতাল ডাকে তখনও কিন্তু আমরা শ্রমিকরা সরকারকে সমর্থন করে গাড়ি চালিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। এতে আমাদের অনেক শ্রমিক নিহত ও আহত হয়েছে। অথচ বর্তমানে সকলের জন্য সাহায্য থাকলেও শ্রমিকরা উপেক্ষিত।
অবশ্য সরকারি সাহায্যের আবেদন করে জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনী, পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের আবেদন হলো বর্তমান সময়ে সরকার যেন গণপরিবহন শ্রমিকদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তা না হলে আমাদের শ্রমিকরা না খেয়ে মরবেন।
তবে প্রথমে দায়সারা উত্তর দিলেও পরে পুনরায় ফোন করে শ্রমিকদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেন সিলেট জেলা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। তিনি প্রথমে সকল উপ শাখার মালিকদের নিজ নিজ শ্রমিকদের সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান।
উপশাখার মালিকরা শ্রমিকদের সাহায্য করেছেন কি না বা না করে থাকলে কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। শুনেছি তামাবিল সড়কের মালিকরা তাদের শ্রমিকদের সাহায্য করেছেন। তবে আর কেউ দেয়নি বলে জানান।
জেলা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেই কেন; এমন প্রশ্নে প্রথমে করোনা পরিস্থিতিতে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার অজুহাত দেখালেও পরে নিজে ফোন করে এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা আগামীকাল সিদ্ধান্ত নিবো। সকল উপশাখাকে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রমিকদের সাহায্যে এগিয়ে আসার ব্যাপার নিশ্চিত করবো। একই সাথে জেলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ করে তা বিতরণের ব্যবস্থা করবো।
অপরদিকে সরকারি সরকারি সাহায্যের ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবুল কালাম জানান, আমরা ইতোমধ্যে সিটি মেয়র, উপজেলাগুলোর ইউএনও, চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে গণপরিবহন শ্রমিকদের তালিকা নিতে বলেছি এবং তাদের সবাইকে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছি।
পরিবহন শ্রমিকরা জেলা প্রশাসক বরাবর তাদের তালিকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তালিকা যতই দেয়া হোক। তারা সবাই অবশ্যই নিজ নিজ ইউনিয়ন মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করে নাম ভোটার আইডি দিয়ে নাম নিবন্ধন করাতে হবে। সাথে তাদের নিজের আইডি শ্রমিক কার্ড বা লাইসেন্সের কপিও দিবেন। কোন জনপ্রতিনিধি যদি কোনরকম গড়িমশি করেন নাম নিতে তাহলে ইউএনও বা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমরা বিহিত ব্যবস্থা নিবো। কারণ কোন শ্রমিক ত্রাণ সহায়তার বাইরে থাকবে না। সেটা পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সংবাদটি পড়া হয়েছে 279 বার

যোগাযোগ

অফিসঃ-

উদ্যম-৬, লামাবাজার, সিলেট,

ফোনঃ 01727765557

voiceofsylhet19@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

সম্পাদক মন্ডলি

ভয়েস অফ সিলেট ডটকম কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।