করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে করোনা ছোবল হানার আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা পর্যাপ্ত সংখ্যক ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে জোর তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু দায়িত্বশীলরা তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেননি বলে অভিমত সচেতন মহলের। ফলে সিলেটসহ সারা দেশেই যথেষ্ট সংখ্যক ভেন্টিলেটরের ঘাটতি রয়েছে।
এই অবস্থায় কয়েকদিন আগে সিলেটে ৯টি ভেন্টিলেটর সরবরাহ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু সেই ভেন্টিলেটরগুলো ৮ দিনেও প্রস্তুত হয়নি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুস বিকল করে দেয় করোনা। ওই অবস্থায় রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন তিনি। ঠিক ওই সময়ে ভেন্টিলেটর জরুরি। এই যন্ত্রটি চাপের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে বাতাস ঢুকিয়ে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে কিংবা আক্রান্ত হওয়ার মতো উপসর্গ কারো মধ্যে থাকলে তাকে রাখার জন্য সিলেটে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ হাসপাতালে ১০০ শয্যা আছে। কিন্তু হাসপাতালটিতে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক ভেন্টিলেটর। এমনকি এ হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের (সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট) কোনো ব্যবস্থাও নেই, যা আইসিইউয়ের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনার জন্য প্রস্তুত করার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে দুটি ভেন্টিলেটর এখানে আনা হয়। এ দুটি ভেন্টিলেটর দিয়ে চালু করা হয় দুটি আইসিইউ। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর না থাকায় সিলেটে সচেতন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে আরো ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ চালুর চাহিদা চেয়ে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে গেল ৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর ৯টি ভেন্টিলেটর সরবরাহ করে। এছাড়া পাঠানো হয় আইসিইউ বেডও।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব ভেন্টিলেটর বর্তমানে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে প্রস্তুতের কাজ চলছে। কিন্তু পাঁচ-ছয়দিনের মধ্যে এগুলো প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। যে প্রকৌশলী এগুলো বসানোর কাজ করছেন, তার সহকারী ঢাকা থেকে আসায় তাকে বাসায় লকডাউন করে রাখা হয়েছে। ফলে গতি পাচ্ছে না কাজ।
এদিকে, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে এখনও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। অক্সিজেনের সিলিন্ডার দিয়েই কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজে জড়িত প্রকৌশলীর সহকারী ঢাকা থেকে আসেন। ফলে তাকে বাসায় লকডাউন করে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এয়ারটাইট রুমে ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ ইউনিট চালু করা হবে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন নাই, তবে একসাথে বড় বড় ৩টি সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেনের কাজ করা হবে। একটি সিলিন্ডার শেষ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যটি চালু হবে। একটি সিলিন্ডার খালি হলে সেটি বদলিয়ে আরেকটি দেওয়া হবে। প্রচুর সিলিন্ডার আছে, এক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।’
এদিকে, করোনাক্রান্ত রোগীদের জন্য ঋণাত্মক চাপের (নেগেটিভ প্রেসার) ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে যে ভেন্টিলেটর এসেছে, সেগুলো ঋণাত্মক চাপের বলে জানিয়েছেন এখানকার আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মহাপাত্র।
সৌজন্যঃসিলেটভিউ২৪ডটকম/