Voice of SYLHET | logo

১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১লা জুন, ২০২৩ ইং

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি!

প্রকাশিত : July 25, 2019, 04:44

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি!

 

ডেঙ্গুজ্বরে কতজন আক্রান্ত হয়েছে এবং কতজন মারা গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকারিভাবে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছে। আর বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা ২৮। মৃত্যুর সংখ্যায় বিস্তর ফারাক থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর একে অপরকে দোষারোপ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, আইইডিসিআর সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। আইইডিসিআর বলছে, তারা সঠিক তথ্য দিচ্ছে; কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর তা প্রকাশ করছে না। রোগীর সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের স্বজনরা। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশা নিধনে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। সরকারের উচিত এখন মানুষকে সঠিক তথ্য জানানো। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ১৩টি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৩ জন। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৩১ জন। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৭৬৬ জন। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনরা মৃতের সংখ্যা ২৮ জন বলে জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, তারা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সব তথ্য পায় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে।

একাধিক জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আইইডিসিআর সঠিক সময়ে কোনো তথ্য দিতে পারে না। বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা যদি আজকের তথ্য তিন সপ্তাহ পরে দেয়, তবে সে বিচার-বিশ্লেষণের দরকার কী? তাহলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে নিতে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলাকাভিত্তিক উপাত্ত পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যক্রম বা পরিকল্পনা করা যেত। এ বছর ডেঙ্গু কেমন হবে আইইডিসিআর যদি সেই প্রেডিকশনটা সময়মতো দিত, তাহলে প্রস্তুতি আরো ভালো হতো। সার্ভিল্যান্সের মূল কাজই হলো এপিডেমিক ডিটেকশন, প্রেডিকশন ও মনিটরিং। তারা তা কিছুই করেনি।

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে গত সপ্তাহে হাসি সমাদ্দার নামের বক্ষব্যাধি হাসপাতালের একজন সেবিকা মারা যান। তিনি ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। এই মৃত্যুর তথ্য নেই সরকারি হিসেবে। মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানান, তাদের হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের তালিকাতে নেই এ চারজনের মৃত্যুর তথ্য।

পুলিশ কর্মচারী হাসপাতালের পরিচালক ডা. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, তাদের হাসপাতালে ১৯ জুন জাকিয়া সুলতানা নামে একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই মৃত্যুর তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকায়। এ ছাড়া ২৪ জুন পাঁচ বছরের সাবিকুন নাহার, ৫ জুলাই সাত বছর বয়সী ইরতিজা শাহাদ প্রত্যয় এবং ১৫ জুলাই চার বছরের লাবণ্য আলিনার মৃত্যুর তথ্য নেই কন্ট্রোল রুমের তালিকায়।

প্রকৃত মৃত্যুর খবর কেন সরকারি হিসাবে আসে না- জানতে চাইলে কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আখতার বলেন, এটা আইইডিসিআর থেকে আমাদের জানানো হয়। তারা ডিক্লেয়ার করলেই কেবল আমরা বলতে পারি। তাদের একটি পৃথক ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’ রয়েছে, যারা এসব মৃত্যুর তদন্ত করে প্রকাশ করে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সব খবরই আমরা জানি। কিন্তু আইইডিসিআরের কাছে যখন সরাসরি খবর চলে যায় এবং তারা যেহেতু বিষয়টি পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই তারা যদি কনফার্ম না করে, তাহলে আমরা তা দিতে পারি না।’
এ বিষয়ে জানতে ডেথ রিভিউ কমিটির প্রধান ও প্রতিষ্ঠানটি পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে একাধিকবার ফোন করে এবং পরিচয় দিয়ে এসএমএস করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা উচিত বলে মন্তব্য এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমানের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরে আইইডিসিআর ম্যাপিং করেছিল কিনা জানি না। যদি করক তাহলে বুঝতে পারত কোন এলাকায় কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। বুঝতে পারত এলাকা শিফট করেছে কিনা। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক, চেম্বার থেকে এ রোগ সংক্রান্ত তথ্য তারা কীভাবে সংগ্রহ করছে, অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় না, অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান এসব তথ্য তাদের কাছে থাকে অথবা জানার জন্য তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সংবাদটি পড়া হয়েছে 994 বার

যোগাযোগ

অফিসঃ-

উদ্যম-৬, লামাবাজার, সিলেট,

ফোনঃ 01727765557

voiceofsylhet19@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

সম্পাদক মন্ডলি

ভয়েস অফ সিলেট ডটকম কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।