শুনলাম সুনামগঞ্জে একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। অনেকে ট্রমাটাইজড হয়ে গেছেন এ বিভৎসতায়। ভাবলাম এ নিয়ে কিছু লিখি।
নিজেই নিজের সন্তানকে হত্যা করা কে বলে ফিলিসাইড। ফিলিসাইড ব্যাপারটা অনেকটা বিরল মানসিক রোগ ‘ম্যানচুজেন সিনড্রোম’ বা ‘মেনচুজেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’ র মতো।
সারা বিশ্বেই এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। আমেরিকাতে বছরে প্রায় চারশো শিশু বাবা মা দ্বারা এরকম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
বেশির ভাগ মা’রাই জড়িত থাকে। বাবা খানিকটা কম জড়িত। ষাট ভাগ চল্লিশ ভাগ। বাচ্চার অনিশ্চিত পরিনতি কথা ভেবে, কিংবা প্রতিপক্ষ কে ফাঁসাতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে। আরো অনেক কারনে হয়ে থাকে। ক’দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম অভাবের তাড়নায় মা’ তার দুই সন্তান সহ আত্মহত্যা করেছে।
ম্যানচুজেন সিনড্রোম (ফ্যাকটিসাস ডিসওর্ডার ইমপোসড অন সেলফ) হলো একটি মানসিক রোগ। নিজেকে অসুস্থ ভাবা, ঘোরতর অসুস্থ হিসেবে প্রমান করা, নিজেকে অসুস্থ হিসেবে উপস্থাপন করা, অযথা বার বার ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া, এবং এর জন্যে চিকিৎসা নেয়ার জন্যে হসপিটালাইজড হওয়া, এসব হলো এর লক্ষন।
আবার ম্যানচুজেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি হলো, অন্যকে যেমন নিজের আপন কাউকে হতেপারে নিজ সন্তান, মা বাবা, ভাইবোন কে অসুস্থ হিসেবে প্রমান করা। অসুস্থ বানিয়ে উপস্থাপন করা। এটা করতে যেয়ে অনেক সময় হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে যায়।
পেশাগত জীবনে এ ধরনের রোগী আমরা পাই।
আমি একবার এক রোগী পেয়েছিলাম যে নিজেকে ব্লাড ক্যান্সারের রোগী হিসেবে উপস্থাপন করতো, এবং এনিয়ে সে বেশ কয়েক বার ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে ব্লাড ট্রান্সফিউশন নিয়েছে।
সে যখন তার ব্লাড ক্যান্সারের পক্ষে সকল রিপোর্ট দেখায় তখন তার কয়েকটি রিপোর্টে অভার রাইটিং ও ম্যানিপুলেশন পাই। সেই সুত্র ধরে এগিয়ে গেলে তার রোগটি ধরা পড়ে। ফলোআপে সে রোগী আর আসেনি। পালিয়ে যায়।
গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করা কে বলে ফেটিসাইড। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে, অবাদ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে অবশেষে গর্ভস্থ সন্তানকে ছুরি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করাও অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এটা ফেলিসাইডের মতো একটা ঘটনা যা অহরহ ঘটে থাকে।
ফেলিসাইড বা ফেটিসাইড কিছুই কাম্য নয়।
ডা. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট