কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:- “আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ”কবি’র এই মর্মবানী আজ ঘুমরে ঘুমরে কেদে উঠে পাহাড়ের কান্না দেখে।দেশের ভিবিন্ন প্রান্তে পাহাড় কাটার হিরিক পড়েছে।পাহাড় কাটায় কোথাও কোন বাধা নেই আজ।প্রকৃতির ধ্বংস্তাত্বতার লিলা খেলায় মেতে উঠেছে এই প্রকৃতির সন্তানেরাই। তাইতো আজ আকাশে মেঘের ঘনঘটা বেজে উঠছে।তাই বুঝি আকাশে আজ বিষের সুর বাজে! পৃথিবীর ভিনগ্রহের প্রাণীরাও আজ প্রকৃতি ধ্বংসে প্রকৃতির কাছেই ফরিয়াদি প্রতিশোধ নাও,প্রতিশোধ নাও।
তাইতো নিরবেই প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে এই প্রকৃতি। আকর্ষিক ভূমিকম্প,ভূমিধস,সাইক্লোন,টর্নেডো অগ্নিপাৎ এ সবই যেন প্রকৃতির প্রতিশোধের প্রাথমিক সতর্কবার্তা।
পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশবাদিদের দূর্বার আন্দোলন থাকলেও কাগজের চুম্বুকের কাছে যেন সেই আন্দোলন মিলিয়ে যায় কোন এক অজানার মোহে পড়ে।
পরিবেশ বাদীদের আন্দোলন কাগজের চুম্বুকের কাছে মিলিয়ে গেলেও প্রকৃতি ঠিকই পরিবেশ হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছে।তাইতো হঠাৎ হঠাৎ ভূমিধসে সংহার হচ্ছে নিরিহ প্রান,ধ্বংস হচ্ছে জনপদ।
বলছিলাম মেঘালয়ের পাহাড়ী সন্তান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরফিন টিলার কথা।
এক সময় সবুজ অরণ্যে বেষ্টিত ছিল এই শাহ আরফিন টিলা। হাজারো প্রজাতির পাখি,খেক শিয়াল,বন মোরগ,বন বিড়াল,কাঠবিড়ালি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার,লজ্জাবতি বানর,হনুমান সবই ছিল এই পাহাড়ি অঞ্চলে।প্রানীদের এই অভয়াশ্রমে প্রথম ধাক্কা আসে ভারত বিভক্তিতে।এর পর আস্তে আস্তে এই পাহাড় গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে গড়ে তুলে জনপদ।ধ্বংস করতে থাকে প্রানীদের এই অভয়াশ্রম।গড়ে উঠতে থাকে আধুনিক সভ্যতার।
একবিংশ শতাব্দির শুরুতে সভ্যতার দুহাই দিয়ে শতবর্ষি এই শাহ আরফিন টিলার পেট খুড়ে বের করে আনে প্রাচ্যের তৈলের খনির মতই মুল্যবান এক খনি।আজব এক খনি নাম তার পাথর খনি।কেউ কেউ এটাকে সাদা সোনার খনি বলে ডাকে।দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছরিয়ে পড়ে এই খনির সুনাম।এই অঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলির ভাগ্য দ্রুতই পরিবর্তনের জন্য ধ্বংস করতে থাকে পাহাড়। খুড়তে থাকে লাল মাটি।এর কিছু দিন পরেই আবস্কার হয় পাহাড় বিধ্বংসী বোমা মেশিন। এর পর মাটি কাটার সময় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে নব্য পয়সা ওয়ালাদের হাতের লাগালে আসতে থাকে ফেলোডার ও স্কেব্যাটর। রাত দিন চলতে থাকে বোমা মেশিন ও স্কেব্যাটরের অবৈধ কর্মকান্ড।
একসময় এই অঞ্চলের মানুষের পাখির কলতানে ঘুম ভাংগতো আজ সেখানে ঘুম ভাঙ্গে বোমার ভয়ানক শব্দে।
রাত দিন চলে সেই বোমা মেশিন।কাগজে চুম্বুকের কাছে পরিবেশবাদীরা থেমে থাকলেও থেমে নেই বোমার আঘাত,স্কেব্যাটরের নখদ আচর।পাথর খেকুরা বোমার আঘাতে আঘাতে ছিন্যভিন্য করতে থেকে এই শিলাভূমি শাহ আরফিন টিলাকে।
উপজেলার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু উপজেলা প্রশাসন থেকে মাঝে মাঝে এই বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্সের অভিজান দিলেও রিতিমত অভিযান চলে কোম্পানীগঞ্জ থানার।
পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের অভিযানকে পাথর খেকুরা গলার রক্ষাকবজ মনে করে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি করছে পাথর রাজ্য।দিনকে দিন ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেছে শাহ আরফিন টিলার বোমা মেশিনের তান্ডব লীলা।শাহ আরফিন টিলা বোমার গর্ভে বিলিন হলেও পাথর খেকুদের নজর এখন কৃষি জমির উপর।
শাহ আরফিন টিলাকে স্থানীয় প্রশাসন রক্ষা করতে না পারলেও সম্প্রতি বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে নড়ে চড়ে উঠেছে পুলিশের উর্ধোতন কর্তপক্ষ।
তাইতো গত ০৮ ও ১২ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ পুলিশের দুটি আকর্ষিক অভিযানে ৭০/৮০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের বোমা মেশিনের ক্ষ্রয়ক্ষতি হলেও আরালেই থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ বোমা মেশিন ও মেশিন মালিকরা।
গত সপ্তাহের শুমাড়ি অনুসারে পুলিশের দুটি অভিযানের পূর্বে শাহ আরফিন টিলার কোয়ারীতে বোমা মেশিন ছিল ৪৫ টি।
পুলিশের দুইটি অতর্কিত অভিযানে ৮ টি বোমা মেশিন, ১৫/১৬ টি লিষ্টার ও কয়েক লক্ষ টাকার পরিবেশ বিদ্ধংশী সরাঞ্জামাদী ধ্বংস করা হলেও ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায় আরো ৩৭ টি বোমা।
ইতমধ্যে সপ্তাহান্তে যোগ হয়েছে আরো ৩৬ টি বোমা মেশিন।সব মিলিয়ে বোমা মেশিনের সংখ্যা ৭৩ টি।
কোয়ারীতে বসানোর প্রস্থুতি নিচ্ছে আরো শতাধিক বোমা।
শাহ আরফিন টিলার উপরাংশ বোমার আঘাতে ধ্বংস হলেও এলাকার যুব সমাজের প্রানের দাবী আর যেন বোমার আঘাত না আসে এই শাহ আরফিন টিলায়।
এই বোমার গর্ভে আর কোন কৃষি জমি যেন বিলিন না হয় সেই দাবী এখন সভ্যতার, এই দাবী এখন পরিবেশের।কিন্তু কে শুনবে সভ্যতার দাবী? কে শুনবে পরিবেশের কান্না?