কাজির বাজার সেতুটির বেশিরভাগ বাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে আছে। ফলে সন্ধ্যে হলেই অন্ধকার নেমে আসে সেতুতে। ফলে রাতে এই সেতু দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। আতঙ্ক নিয়ে পার হতে হয় সেতু।
নগরীর যানজট নিরসনে ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরীর শেখঘাটে নির্মিত কাজির বাজার সেতু। নির্মাণের পর থেকে যান চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয় এ সেতুতে। তবে সম্প্রতি ক্বিন ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় কাজির সেতুর উপর চাপ বেড়েছে।
৩৬৬ মিটার দীর্ঘ এ সেতুতে রয়েছে ১২৬টি বাতি। তবে এর বেশিরভাগই অনেকদিন ধরে বিকল।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর উপর কাজির বাজার সেতুটি উদ্বোধন হয়। এ সেতুতে সন্ধ্যায় যানবাহন ও যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর উভয় পাশে স্থাপন করা হয় ১২৬টি বাতি। সেতু নির্মাণ ও যাত্রী সাধারণের চলাচল শুরু হওয়ার পর কিছুদিন বাতিগুলো আলো ছড়ালেও আস্তে আস্তে নষ্ট হতে শুরু করে সেতুর বাতিগুলো। এদিকে দীর্ঘদিন থকে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বাতিগুলো সংস্কারে নেই কোনো উদ্যোগ।
বৃহস্পতিবার রাতে কাজির বাজার সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর উভয় পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকলেও সেগুলোতে বাতি নেই। এর মধ্যে আবার কয়েকটি বাতি ভেঙ্গে খুঁটির মাথায় ঝুলে রয়েছে। কয়েকটিতে বাতি থাকলেও তা জ্বলে না। ফলে সেতুর উপর দিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে। নির্মল বাতাসের জন্য সেতুতে ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীরা ভয়ে থাকে সবসময়।
এ সেতু নিয়ে নিয়মিত চলাচল করা রাসেল নামের এক অটোরিকশা চালক জানান, ২০১৬ সালে সেতুটি উদ্বোধনের বছর খানেকের মধ্যে বাতিগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এর মধ্যে কয়েকটি বাতি দুর্বৃত্তরা ঢিল মেরে ভেঙ্গে দিয়েছে। পরবর্তী সংস্কার করা হলেও বেশিরভাগ সময়ই এ সেতুটি অন্ধকারে থাকে।
এদিকে ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর উপর নির্মিত ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ সংস্কারজনিত কারণে ১ সেপ্টেম্বর থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এ অবস্থায় সিলেট নগরীর উপশহরের পাশে নির্মিত শাহজালাল সেতু ও শেখঘাটে নির্মিত কাজির বাজার সেতু দিয়ে যান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অন্ধকারের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই কাজির বাজার সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় যাত্রী আর চালকদের। চলাচলরত গাড়ির আলো দিয়েই পথ চলতে হয় পথচারীদের।
সিএনজিচালিত আরেক অটোরিকশা চালক আলম মিয়া বলেন, বাতিগুলো না জ্বলার কারণে প্রতিনিয়তই নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়। এর মধ্যে অন্ধকারে গাড়ি চালানোর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে। এছাড়াও প্রায় সময়েই এ সেতুতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটাও আমাদের মধ্যে একটা আতঙ্কের কারণ।
এদিকে ‘সেলফি ব্রিজ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ সেতুতে আগে সন্ধ্যার পর আশেপাশের এলাকার অনেকে ঘুরতে আসলেও বাতি না থাকায় এখন তা অনেকটাই কমে গেছে।
নাসরীন নামের এক তরুণী বলেন, এখানে আগে অনেক লোকজন আসতেন একটু প্রশান্তির জন্য। কিন্তু এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। তিনি বলেন, এ ব্রিজটিতে অধিকাংশ সময় বাতিগুলো নষ্ট থাকে। দুপাশেই থাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এর মধ্যেই এখানে চলে বাজে লোকদের আড্ডা। আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন কি হয়।
কাজির বাজার সেতুর বাতি নষ্ট হয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী (বৈদ্যুতিক শাখা) মো. রুহুল আলম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা গত ঈদুল আযহার আগে এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। তখন থেকেই আমরা বাতিগুলোকে সংস্কার করার উদ্যোগ নেই। ইতোমধ্যে আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি মূল সমস্যাটা কোথায়।
তিনি আরও বলেন, এ ব্রিজে স্থাপন করা বাতিগুলোর মূল লাইন বা সার্ভিস লাইন কনসিল্ড ওয়্যারিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে। যা গত ঈদুল আযহার আগে দুর্বৃত্তরা ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। এই লাইন নতুন করে স্থাপন করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও আমরা ব্রিজের এক পাশের লাইন ঠিক করে তাতে বাতি জ্বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
সিসিকের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এটাকে পুরোপুরি ঠিক করতে দ্রুতই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।