নুরুজ্জামান,কানাইঘাট:
ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকদের নামের চুড়ান্ত তালিকা গত শনিবার প্রকাশ করেছে ভারত সরকার।
তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১১লাখ মানুষ।আর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ।এই তালিকা প্রকাশের পরপরই উত্তপ্ত হয়ে উটেছে পুরো আসাম।
আসামের অর্থ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন-‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলব এবং তাদের লোকদের ফিরিয়ে নিতে বলব।’কিন্তু যত দিন ফিরিয়ে না নেওয়া হচ্ছে, তত দিন আমরা তাদের ভোটাধিকার দেব না, তবে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকার ভারতের বন্ধু। তারা আমাদের সহযোগিতা করছে। এনআরসি তালিকায় নাম না থাকা লোকেদের ফেরত পাঠাতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।”
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরো বলেন, ‘এনআরসি তালিকায় নাম নেই মানে এটা নয় যে তাদের বিদেশি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। তাদের ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। কিন্তু তত দিন পর্যন্ত ভারতের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে তাদের অংশ নিতে দেওয়া হবে না।’বলে জানান তিনি।
ভারতীয় সংবাধ মাধ্যমগুলোর এমন সংবাদ প্রকাশের পর থেকে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত গুলোতে কড়া সতর্কতা ও নজরদারী বৃদ্ধি করেছে বিজিবী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কেউ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। সেজন্য সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বসবাসকারীদেরকে বিজিবির ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।একটি সূত্র জানায়,কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে চোরাকারবারিরা একাধিক চোরাই পথ তৈরী করে দীর্ঘদিন থেকে ভারতের লোকজনের সাথে চোরাচালান চালিয়ে আসছে। এসব পথ দিয়ে প্রায় সময় চোরাকারবারিরা ভারতে অনুপ্রবেশও করে থাকে। আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে মারাত্মক উত্তেজনা দেখা দিলে এসব চোরাই পথ ব্যবহার করেই তালিকা থেকে বাদ পড়া আসামের নাগরিকরা কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে অনুপ্রবেশ করতে পারে কিংবা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে পাঠাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জসহ সিলেটের সীমান্ত এলাকায় যেকোনো অনুপ্রবেশ টেকাতে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সাঈদ হোসেন। তিনি জানান, ‘আসামের বিষয়ে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ তথা সিলেট সীমান্তে তেমন কোন প্রভাব পড়বে বলে আমাদের কাছে এমন কোন খবর নেই। এরপরও বিজিবিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া আছে। যাতে এর প্রভাব কানাইঘাট জকিগঞ্জসহ সিলেটের অন্য সীমান্তে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।আসামের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে’। ‘সিলেটের সকল সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে তিনি- জানান।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ১৯ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে.কর্নেল সাইদ হোসেন আরো বলেন- ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। ভারতীয় বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকদের কোনও তৎপরতা কেউ দেখতে পেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পকে অবহিত করে।
জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবু নাসের জানিয়েছেন, ভারতের আসাম নিয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত নতুন কোনও নির্দেশনা আসেনি। যদি কোনও নির্দেশনা আসে তাহলে সেভাবেই পুলিশ কাজ করবে। আসাম নিয়ে নতুন কোনও নির্দেশনা না থাকলেও পুলিশ সবসময় জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের বিষয়টি বিজিবি দেখছে। ‘নতুন কোন নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’