সিলেটকে দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটি হিসাবে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এর অংশ হিসাবে এ নগরীর ৬২টি পয়েন্টে ফ্রি ওয়াইফাই জোন তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য নগরীতে ১২৬টি ওয়াই-ফাই এক্সেস পয়েন্টে (এপি)ও স্থাপন করা হবে। এসব এক্সেস পয়েন্টে নগরবাসী ছাড়াও দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও রেজিস্ট্রেশন করে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন।
ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান জানান, সিলেটকে দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটি হিসাবে রূপান্তরের অংশ হিসাবে এরই মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আমরা নেটওয়ার্ক-এ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় নগরীতে আইপি ক্যামেরা বসানোরও কাজ চলছে।
তিনি জানান, এর মধ্যে বিনামূল্যের ওয়াইফাই জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী চার মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষে আগামী নভেম্বরে সিলেট নগরবাসী ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, প্রকল্পের কাজ শেষে বিনামূল্যের ওয়াইফাই জোন মেইনটেইনেন্সের দায়িত্বে থাকবে সিসিক। এ জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তিন মাস পরপর মিটিং করে সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
যেসব এলাকায় হচ্ছে ওয়াই-ফাই জোন : প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট নগরের ৬২ এলাকায় ১২৬টি এক্সেস পয়েন্ট থাকবে। এর মধ্যে চৌকিদেখি একটি, আম্বরখানা পয়েন্টে চারটি, দরগা গেটে দুটি, চৌহাট্টায় তিনটি, জিন্দাবাজারে চারটি, বন্দরবাজার ফুট ওভার ব্রিজ এলাকায় তিনটি, হাসান মার্কেট এলাকায় ৫টি, সুরমা ভ্যালি রেস্ট হাউজ এলাকায় দুটি, সার্কিট হাউজ-জালালাবাদ পার্ক এলাকায় তিনটি, ক্বিন ব্রিজের দুই প্রান্তে ৬টি, রেলওয়ে স্টেশনে ৪টি, বাস টার্মিনালে ৩টি, কদমতলী পয়েন্ট ও সংলগ্ন এলাকায় ৫টি, হুমায়ূন রশীদ চত্বরে ৩টি, আলমপুরের পাসপোর্ট অফিসে ২টি, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় এলাকায় ৩টি, সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ২টি, উপশহরের রোজ ভিউ পয়েন্টে ৩টি, শাহজালাল উপশহর ই-ব্লক ও বি-ব্লকে একটি করে ২টি, শিবগঞ্জ পয়েন্টে ২টি, টিলাগড় পয়েন্টে ৩টি, এমসি কলেজ এলাকায় ২টি, দক্ষিণ বালুচরে ১টি, টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ১টি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ১টি, শাহী ঈদগাহ এলাকায় ৩টি, কুমারপাড়া জামে মসজিদ এলাকায় ৩টি এবং কুমারপাড়া রোডে ২টি এক্সেস পয়েন্ট থাকবে।
এ ছাড়া নগরের নাইওরপুল পয়েন্টে দুটি, মিরাবাজার রোডে একটি, রায়নগর এলাকায় দুটি, সোবহানীঘাট পুলিশ স্টেশন এলাকায় দুটি, ধোপাদিঘিরপাড় বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যানে একটি, বন্দরবাজার জামে মসজিদ এলাকায় দুটি, নয়াসড়ক পয়েন্ট ও সংলগ্ন এলাকায় চারটি, কাজীটুলা এলাকায় দুটি, চৌহাট্টা রোডে তিনটি, হাউজিং এস্টেট রোডে একটি, সুবিদ বাজারে একটি, মিরের ময়দানে একটি, পুলিশ লাইন্স রেএড একটি, রিকাবীবাজার জেলা স্টেডিয়ামে দুটি, মদন মোহন কলেজ এলাকায় একটি, মির্জাজাঙ্গাল রোডে দুটি, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এলাকায় একটি, খুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এলাকায় একটি, তালতলা হোটেল গুলশান এলাকায় একটি, কাজিরবাজার ব্রিজ দুটি, কাজিরবাজার রোডে দুটি, খোজারখলা সিলেট টেকনিক্যাল স্কুল এলাকায় একটি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় একটি, বাগবাড়ী ওয়াপদা মহল্লা এলাকায় একটি, পাঠানটুলা একটি, মদিনা মার্কেট পয়েন্টে দুটি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয় গেট এলাকায় দুটি এক্সেস পয়েন্ট (এপি) থাকবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব এক্সেস পয়েন্টের একেকটিতে এক সঙ্গে ৫০০ জন যুক্ত থাকতে পারবেন। এর মধ্যে এক সঙ্গে ১০০ জন উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটি এক্সেস পয়েন্টে ব্যান্ডউইথ থাকবে ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড (১০এমবিপিএস)। আর একেকটি এক্সেস পয়েন্টের চতুর্দিকের ১০০ মিটার অর্থাৎ প্রায় ৩০০ ফুট করে আওতা থাকবে।
যেভাবে যুক্ত হওয়া যাবে : বিনামূল্যের ওয়াই-ফাই সুবিধা ভোগ করতে হলে একজন ব্যক্তিকে এসব নিরাপত্তার জন্য মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে যুক্ত হতে হবে। যুক্ত হওয়ার প্রথম ধাপে মোবাইল বা ল্যাপটপে নিজের নাম, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। ফিরতি এসএমএস এ একটি কোড আসবে। পরে সে কোডটি ইনপুট করলেই লগ ইন সম্পন্ন হয়ে যাবে। ফিল্টারিং করা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া ডাউনলোডেও থাকবে সীমাবদ্ধতা। গ্রাহকের সব তথ্য জমা হবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডাটাবেজে।