আমির উদ্দিন, মালয়েশিয়া থেকে :–
সায়াঙ্গি মালয়েশিয়াকু, মালয়েশিয়াা বেরশিহ’ -যার অর্থ মালয়েশিয়া আমার ভালোবাসা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মালয়েশিয়া। এ স্লোগানকে সামনে রেখে মালয়েশিয়ার পার্সিয়ান পারদানায় জমকালো রীতিতে শুরু হয়েছে ৬২তম জাতীয় দিবস উদযাপন। দিবসটির কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছেন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার মানুষ।
ইয়াং দি-পার্টুয়ান আগুন আল সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতউদ্দিন আল-মুস্তফা বিল্লাহ শাহ এবং রাজা পারমাইসুরি আগং টুঙ্কু আজিজাহ আমিনাহ মাইমুনাহ ইস্কান্দ্রিয়া শনিবার (৩১ আগস্ট) সকাল ৮টায় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহামাদ ও স্ত্রী ডা. সিটি হাসমাহ মোহাম্মদ আলী রাজকীয় দম্পতির মূল মঞ্চে যাওয়ার আগে তাদেরকে স্বাগত জানান।দেশটির ১৬তম ইয়াং দি-পার্টুয়ান আগোংয়ের নিয়োগের পর সুলতান আবদুল্লাহ রাজা হিসেবে মার্দেকা উদযাপনে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। কুচকাওয়াজে অংশ নেন উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ডা. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল, আনোয়ার ইব্রাহীম, মাল্টিমিডিয়া ও যোগাযোগমন্ত্রী গোবিন্দ সিং দেও, অন্যান্য মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী এবং বিদেশি বিশিষ্টজনরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দু’বছর ধরে কুয়ালালামপুরের দাতরান মর্দেকা থেকে সরিয়ে নিয়ে প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় জাতীয় দিবস উদযাপনের আয়োজন করা হচ্ছে। ব্যস্ত শহরে ট্র্যাফিক যানজট এড়াতে কুচকাওয়াজে অংশ নিতে স্থানীয় সময় ভোর ৬টা থেকেই প্রশাসনিক রাজধানীতে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ।
২০১৮ সালের মে মাসে (পাকাতান হারাপান) মাহাথির সরকার, প্রশাসন পুত্রজায়ায় মারদেকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মালয়েশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহংকারের দিন এটি (৩১ আগস্ট)। পৃথিবীর মানচিত্রে নিজস্ব ভূ-খণ্ড নিয়ে মালয় জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটে এই দিনে।
১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে রক্তপাতহীন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জন করে মালয়েশিয়া। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে গেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত ভিত্তিতে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।
আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগেও মালয় অঞ্চলে মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সুদূর অতীতে এ অঞ্চলে হিন্দু-বৌদ্ধ শাসকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩ শতকে এ উপদ্বীপে ইসলামের আগমন ঘটে। ১৫ শতকে মালাক্কান সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক কারণে মধ্য এশিয়া, ভারত ও আরবদের সঙ্গে মালয়ের সংযোগ স্থাপিত হয়।
গত ৩ দশকে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি লাভ করে। যার ফলে পুরো বিশ্ব এক বাক্যে ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত নেতৃত্বদানকারী মাহাথির মোহাম্মদকে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ‘ভিশন ২০২০’ বাস্তবায়নে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঘুরে দাঁড়াতে কাজ করে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।
১৯৭০ সালেও মালয়েশিয়ার অধিকাংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। ১৯৭১ সালে নতুন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে মালয়েশিয়া। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৯০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়াতে দারিদ্র্যের হার বিস্ময়করভাবে কমে যায়।মালয় ভাষা মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা। তবে দেশটির ইংরেজি ভাষা সর্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দেশটিতে আরও প্রায় ১৩০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, বুগিনীয় ভাষা, দায়াক ভাষা, জাভানীয় ভাষা এবং তামিল ভাষা উল্লেখযোগ্য।মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। তবে বৌদ্ধ, তাও, হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য উপজাতীয় ও সংখ্যালঘু ধর্ম স্বাধীনভাবে পালিত হয়।