স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের ৪টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলার ১৩টি, সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি, হবিগঞ্জ জেলার ৮টি ও মৌলভীবাজার জেলার ৮টি উপজেলাকে ডায়রিয়া উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে মেডিকেল টিম। বিভাগে ৪২৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এরমধ্যে সিলেটে ১৪০টি, সুনামগঞ্জে ১২৩টি, হবিগঞ্জে ৯০টি ও মৌলভীবাজারে ৭৪টি মেডিকেল টিম রয়েছে।
সিলেট বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হারে শীর্ষে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এই জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৬৫ জন। সুনামগঞ্জের পরে রয়েছে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলা। হবিগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭৫ জন। আর সিলেটে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৯ জন। অপরদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৪ জন।
সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিনে সিলেটে ডায়রিয়ার প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। গত ১৭ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত ১১৪ জন ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ৩ দিনে তা ৫৫০ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জেলায় ১৪০টি এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৬টি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। এছাড়া কানাইঘাটে ১২টি, জৈন্তাপুরে ১১টি, বিশ্বনাথে ১১টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জকিগঞ্জে ১০টি, সদর উপজেলায় ১০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, ওসমানীনগরে ৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বালাগঞ্জে ৭টি ও কোম্পানীগঞ্জে ৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে জেলা শহরের জন্য ৩টি টিম রাখা হয়েছে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মে জয় শংকর দত্ত বলেন,বন্যা পরবর্তী সময়ে জেলায় ডায়রিয়ার প্রকো বাড়ছে। পাশাপাশি চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চর্মরোগ নিয়ে অনেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে ডায়রিয়া ছাড়া অন্যান্য রোগের রিপোর্টিং এখনও পুরোপুরিভাবে নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রিপোর্টিং করা হচ্ছে। সিলেটে বন্যাপরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির তেমন অবনতি ঘটছে না। আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের তিনটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়াও ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা প্রতিদিন ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন করবো। যা আগামী ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগী বাড়ছে। তবে আতঙ্কজনক পর্যায়ে নয়। গ্রামীণ জনপদ নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। তবে সিটি কর্পোরেশন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ নগরীর যেসব এলাকা পানিতে তলিয়েছে এর একটা বিশাল জনগোষ্টী বস্তিবাসী। এই নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর কোন চাপ নেই। ওসমানী হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু রোগী থাকলেও তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। নগরীর শাহী ঈদগাহের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর কোন চাপ নেই। সব মিলিয়ে সিলেটের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব একটা খারাপ বলা যাবে না