নিজস্ব প্রতিবেদক:
ত্যাগের মহিমা ও পরিচ্ছন্নতার সচেতনতায় উদ্ভাসিত হোক সকলের জীবন।প্রাচীনকাল থেকেই সিলেট সুরমা,কুশিয়ারার জলে ভেজা একটি সমৃদ্ধ জনপদ। হাজার বছরের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের লালিত এ জনপদকে প্রকৃতিও যেন নিজের মতো করে সাজিয়েছে। শাহজালাল (রহঃ) এর চরণ স্পর্শে এ অঞ্চলে তৈরি হয়েছে আধ্যাত্মিকতার ছায়াময় পরিবেশ। ঐতিহ্যে সমৃদ্ধি এ জনপদের জালালি কইতরের ডাকা বাক-বাকুম শব্দে ঘুম ভাঙে এখানকার জনপদের মানুষের। কমলা লেবু আর চায়ের পাতার ঘ্রাণ পাগল করে তুলে তাদের হৃদয়। প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা এ জনপদের মানুষের কন্ঠে তাই খেলা করে প্রকৃতির সুর। তাই সুরমার তীর ভরে উঠেছে হাছন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, আর রাধা রমনের দরাজ কন্ঠে। সিলেটকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন না থাকলেও কিছু ঐতিহ্য, স্থান, স্থাপনা সিলেটকে আলাদা পরিচয় অন্যন্য করে তুলেছে।
সিলেট ৩৪৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চোট্ট একটি বিভাগীয় শহরকে পরিচ্ছন্নতার মডেল নগরী হিসেবে তুলে ধরার জন্য এক ঝাঁক মেধাবী আর কর্মঠ তারুণ্যের সমন্বয়ে গড়ে তুলা হয়েছে Clean City (পরিচ্ছন্ন শহর) সংগঠন। যার শ্লোগান হচ্ছে- আমার শহর, পরিচ্ছন্ন শহর। পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার দৃঢ় লক্ষ্যে সচেতন তারুণ্যের সৃষ্টি Clean City (পরিচ্ছন্ন শহর) আত্নপ্রকাশের পর থেকেই সাপ্তাহিক পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১১ আগস্ট (রবিবার) নির্ধারণ করা হয়েছে সিলেট নগরীর সর্বজনবিদিত জায়গা মোগল ফৌজদার ফরহাদ খাঁ কর্তৃক নির্মিত মনোমুগ্ধকর কারুকার্যময় শাহী ঈদগাহ।
সিলেটের শাহী ঈদগাহ, দেশের একটি প্রাচীনতম ঈদগাহ। এখানে এক সাথে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মুসল্লীরা একসাথে ঈদের জামাত আদায় করতে পারেন। ক্লিন সিটির পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদ উল ফিতরে ঈদগাহ কমিটির সাথে সংযুক্ত হয়ে শেষ মূহুর্তে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় পবিত্র ঈদ উল আযহায়ও উক্ত স্থানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ঈদের ক্ষনগনা শুরু হওয়ার সাথেসাথে শাহী ঈদগাহ কমিটি, নগর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক সিলেট এর পক্ষ হতে উক্তস্থানে চক্রাকারে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেন মুসল্লীদের সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের স্বার্থে।
তথাপি দেখা যায় মানুষজন বিভিন্ন ধরনের ময়লা ফেলায় এবং বিভিন্ন গাছের পাতা ঝরে পড়ে জায়গাটা বেশ অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। ক্লিন সিটির সদস্যরা এসব ময়লা ও গাছের পাতা সংগ্রহ করেন এবং ঈদগাহে আগত বিভিন্ন মানুষকে যত্রতত্র ময়লা না ফেলার জন্য অনুরোধ জানান। এই ইভেন্টের মাধ্যমে যদি একজন মানুষও সচেতন হয়, তবেই মনে হবে কার্যক্রম স্বার্থক হয়েছে।
পুরো সিলেট শহরের মানুষজন যখন কোরবানির পশু ক্রয়ে ব্যস্ত এবং শ্রাবনের তীব্রতর গরমে হাসফাস করে ঘরের বাহিরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন, তখন ক্লিনসিটির ক্ষুদ্র তারুণ্যের এই ক্ষুদ্রকর্ম নিজ শহরের প্রতি গভীর ভালবাসা আর মায়ার বহিঃপ্রকাশ।
সুতরাং রাষ্ট্রের একজন সুবিবেচক নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন এবং আশপাশের সকলকে সচেতন করা প্রয়োজন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে মুখ্যভূমিকা পালন করবে।
উক্ত ইভেন্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের সম্মানিত কাউন্সিলর জনাব রাশেদ আহমেদ, তিনি ক্লিন সিটির কার্যক্রমের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন এবং আগামীতে এ বিষয়ে উনার সহযোগিতার হাত প্রসারিত থাকবে মর্মে তাদের আশ্বস্ত করেন।