নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বৃটেনে করোনা মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর ধরে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিদিন নতুন নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর খরব বৃটেনের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে নতুন ভাইরাস আতংক। বর্তমানে দেশটিতে লকডাউন জারি থাকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, পাব, মার্কেট, সৈকত, স্টেডিয়াম, জিম, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান। তারপরও প্রতিদিন চারদিকে মৃত্যু আর আক্রান্তের খবর। এপর্যন্ত দেশটিতে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে গত তিন মাসে দুই শতাধিকের ওপরে মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পরিচিতজন ও স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু কিছু মৃত্যুর সংবাদ জানা গেলেও বেশির ভাগই অজানা থেকে যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশটিতে বহু বাংলাদেশিসহ মুসলিমরা মৃত্যুবরণ করার ফলে লাশের জানাজা, দাফন-কাফন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে লাশের মিছিল আরো দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমানে মর্গগুলোতে সারি সারি লাশ। মুসলিমদের জানাজা ও গোরস্থানগুলোতে লাশ দাফনে সিরিয়াল পেতে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। একেকটি লাশ দাফন-কাফনে ৪/৫ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এদিকে, করোনায় বৃটেনে এপর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৫০ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ১৪৮ জন (৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ এপর্যন্ত)। এর মধ্যে বিশিষ্টজনসহ প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশিসহ মুসলিম হবে ১ হাজারের উপরে। এখানেই শেষ নয়, এক বছরে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে এনএইচএস-এর দুই শতাধিক ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বে যুদ্ধেও বৃটেনে এত মানুষ প্রাণ হারাননি। তবে আশার কথা হলো- দেশটিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে এবং এপর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৮৬ জন মানুষ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৩৯২ জন মানুষ দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশী কমিউনিটির বিষয়ে কথা হয় ব্রিকলেইনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্রিটেনের প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকা জনমত-এর সহকারী সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন আহমদের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বহু পরিচিতজন মৃত্যুবরণ করেছেন। হাজার হাজার বাংলাদেশি মানুষ আক্রান্ত রয়েছেন। প্রায় ঘরে করোনা রোগী। কার নাম বলবো। শেডওয়েলের ব্যবসায়ী সাব্বির উদ্দিন বলেন, লন্ডনের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, এক ঘরে ৩/৪ জন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করছেন। আমার পরিচিত অনেকে মারা গেছেন, অসুস্থ বহু সংখ্যক।
এ ব্যাপারে ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইস্ট লন্ডন মসজিদ-এর ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান বলেন, বর্তমানে আমরা প্রতিদিন ৩/৪ জন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী লাশের জানাজা পড়াচ্ছি। আগে অনেক বেশি ছিলো। প্রতি জানাজায় ৩০ জন অংশগ্রহণ করতে পারেন। ব্রিকলেইন মুসলিম ফিউনারেল সার্ভিসের (লাশ দাফন-কাফনকারী) ডাইরেক্টর পারভেজ ক্রোরেশি বলেন, গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও এই বছরের জানুয়ারী এই তিন মাসে ২০০ শত লাশ দাফন-কাফন করেছি। এর মধ্যে ৯৯ পার্সেন্ট করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। তবে মোট হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ আমরা একা দাফন-কাফন করি না। আরো তিনটি ফিউনারেল সার্ভিস রয়েছে। আমরা আগে প্রতিদিন ৫/৬ জন করে দাফন-কাফন করতাম, এখন লকডাউন জারি রয়েছে এবং মানুষও সচেতন হয়েছে, পাশাপাশি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ায় একটু কমে গেছে। তিনি বলেন, বেশী দাফন করা হয় চিংওয়েলের গার্ডেন অফ পিসে এবং সাউথ লন্ডনের সিডকাপের ইটারনেল গার্ডেন গোরস্থানে। ইটারনেল হলো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নিজস্ব জায়গা। এখানে কাউন্সিলের বাসিন্দারা কম খরচে দাফন করতে পারেন