Voice of SYLHET | logo

৭ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | ২১শে মার্চ, ২০২৩ ইং

গরীবের ঈদুল আদ্বহা’

প্রকাশিত : August 08, 2019, 15:40

গরীবের ঈদুল আদ্বহা’

-মোহাম্মাদ আশরাফ উদ্দিন

টাকার অভাবে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে লেখা পড়ার ইতি টানতে হয়েছে তারেকের বড় ভাই বিলালের। দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। তারেক ক্লাশ টু তে পড়ে এবং বোন সাবিনার বয়স মাত্র পাঁচ মাস। তাদের বাবা রিকশা চালিয়ে কোনো রকম পরিবারের খাবারের টাকা উপার্জন করেন তাও আবার মাঝে মধ্যে দিনে এক বেলা খেয়ে তুষ্ট থাকতে হয় তাদেরকে। একদিন সকালে জমির মিয়া রিকশা নিয়ে বের হওয়ার সময় তারেকের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, বাবা দোয়া করো যাতে আজ একটু বেশী টাকা উপার্জন করতে পারি যেন দিন শেষে তোমার জন্য গরুর গোশত কিনে আনতে পারি। কারণ তারেকের খুব শখ সে মঝা করে গরুর গোশত খাবে, এরকম খাওয়ার ভাগ্য তার কোনোদিন হয়নি! আর হবেই বা কি করে? যারা তিন বেলা ঠিক মত খেতে পারেনা তাদের আবার ধনীদের মত গোশত খাওয়া…!
রাত আটটা বাজতেছে… জমির মিয়া সেই সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিলেন এখনও ফেরার কোনো নামই নেই! কিন্তু অন্যদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই তিনি ঘরে ফিরে আসেন! বিলাল! যা তো একটু রাস্তার দিকে গিয়ে দেখ তোর বাবা আসছেন না কেন? বিলালকে বললেন তার মা। দরজা খুলে ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই দূর থেকে দেখল লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন লোক কাকে যেন ধরে ধরে নিয়ে আসছেন… পাশে যেতেই বাবা বলে বিলাল চিৎকার করে কেঁদে উঠলো! ছেলের চিৎকার শোনে ছোট দুই ছেলে মেয়েকে ঘরে রেখে মা দৌড়ে ঘর থেকে বাহিরে আসলেন… এসে তিনিও হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলেন! ছোট ছেলে তারেক বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে আর বলছে, বাবা তুমি না বলেছিলে আজ আমার জন্য গোশত কিনে আনবে…? এখন কথা বলছনা কেন? কথা বলো বাবা…
যারা তার বাবার লাশ নিয়ে এসেছিল তারা বললো যে, তিনি রিকশা চালাচ্ছিলেন হঠাৎ বড় ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকের চাকার নিচে তিনি পড়ে যান ফলে তার মৃত্যু হয়েছে!
অবুঝ ছেলে তারেককে গোশত খাওয়ানোর আগেই দুনিয়া ছেড়ে মা’বুদের নিকট চলে গেলেন তার পিতা…
আজ বাবা মারা যাওয়ার প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে… দুই মাস ধরে মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে ছেলে-মেয়েকে কোনো মতে খাওয়াচ্ছেন মা। ঈদ চলে এসেছে… তিন দিন পরে ঈদুল আদ্বহা… তারেক তার ভাইকে বলছে, ভাইয়া এবার ঈদে যারা কোরবানী দিবে আমরা তাদের বাসায় গিয়ে গোশত আনব, বিলালও বলল, ঠিক আছে ভাই এবার ঈদে তোর শখ মিঠিয়ে গোশত খাওয়াব।
ঈদের দিন সকালে দুই ভাই মায়ের হাতের সেমাই খেয়ে বাবার শূণ্যতা বুকে নিয়ে এক সাথে ঈদের নামাজে গেছে। গত ঈদে তাদের বাবা সাথে ছিলেন কিন্তু এবার নেই তাই তাদের মন কিছুটা খারাপ হলেও তারা এটা বিশ্বাস করে যে, মন খারাপ করে কি লাভ? একদিন সবাইকেই তো বাবার মতো আল্লাহর ডাকে চলে যেতে হবে।
নামাজ থেকে এসে মাকে বলল, মা! বড় ব্যাগ দাও এবার বেশী করে গোশত আনব। ব্যাগ হাতে নিয়ে দুই ভাই প্রথমে এক বাড়িতে গেল, যাওয়ার পরে সেই বাড়ির মালিক ধমক দিয়ে বলল, যাও! পরে এসো, এখনও গোশত ভাগ করা হয়নি…! দুই ভাই কষ্ট পেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে অন্য বাড়িতে গেল, সেখানে গোশত নেওয়ার সময় তারেক মালিককে বলল, চাচা! আমাদেরকে একটু বেশী গোশত দেননা। মালিক ধমক দিয়ে বলল যা পেয়েছিস তা নিয়েই ভাগ এখান থেকে…! অন্য বাড়িতে গিয়েও একই অবস্থা। শেষে যে বাড়িতে তারা গিয়েছিল সেখানে গিয়ে দেখল বাড়ির মালিক তার এক আত্মীয়কে ব্যাগ ভরে গোশত দিচ্ছেন, আত্মীয় বলছেন, এত গোশত দেওয়া লাগবেনা। আমি তো কোরবানী দিয়েছি… তার পরেও মালিক জোর করে তার আত্মীয়কে গোশত দিলেন… সেই মূহুর্তে দুই ভাই গিয়ে হাজির হল গোশত নেওয়ার জন্য তখন মালিক তাদের ব্যাগে তিন-চার টুকরো গোশত দিয়ে বিদায় দিলেন!
যাবার সময় তারেক বিলালকে বলছে দেখেছ ভাইয়া, আমরা কোরবানী দেইনি, আমাদের সামর্থ নাই, আমরা গরীব তাই এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা গোশত আনি আমাদের ঈদ আনন্দ করার জন্য। তাও অনেক লোকের ধমক খেতে হয়। অথচ যারা কোরবানী দেয়, যাদের সামর্থ আছে তাদেরকে জোর করেও তাদের আত্মীয়-স্বজন বেশী গোশত দেয়। আর আমাদের সামর্থ নাই তারপরেও আমাদেরকে দেয় তিন-চার টুকরো…!
সমাজের মানুষ এত খারাপ কেন?
তারা কি আমাদের দুঃখ বুঝেনা?
এমন কি কোনোদিন হবে? যেদিন ধনী লোকেরা আমাদেরকে আদর করে তাদের কাছে আমাদের যে পাওনা আছে তা আদায় করবে?
ঈদের দিনেও এরকম শত প্রশ্ন মনে নিয়ে, বড়লোকদের আচরণে দুঃখ পেয়ে বাড়ি ফিরছে বিলাল এবং তারেক দুই ভাই…
শুধু তারাই নয় এ সমাজে তাদের মত এরকম অনেকেই আছে যাদের সাথে টাকাওয়ালারা এভাবেই দূর্ব্যবহার করে, অথচ ধনীদের সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিলাল, তারেকদের মত অসহায়, গরীবদের হক্ব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সংবাদটি পড়া হয়েছে 1114 বার

যোগাযোগ

অফিসঃ-

উদ্যম-৬, লামাবাজার, সিলেট,

ফোনঃ 01727765557

voiceofsylhet19@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

সম্পাদক মন্ডলি

ভয়েস অফ সিলেট ডটকম কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।