টানা ২৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা-বাগান। এর মধ্যে গত শনিবার (২২ আগস্ট) রাতে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এজিএম এর গতিরোধ করে মারধর, গাড়ি ভাংচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়েছে। ধলই চা-বাগান কোম্পানির এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় এ মামলা করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মামলার ১নং আসামি মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, ২নং আসামি চা যুব নেতা মোহন রবিদাস ও ১১ নং আসামি চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীনের উস্কানিতে বাকি আসামিরা চা-বাগান ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে নির্ধারিত মজুরির চেয়ে অধিক মজুরি বেআইনিভাবে আদায়ের স্বার্থে বেশ কিছুদিন যাবৎ পরিকল্পিতভাবে ষয়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এরই পরিপেক্ষিতে গত ২৯ জুন সকল আসামিসহ উশৃঙ্খল শ্রমিকগণ বাগানে অবৈধ ও বেআইনি ধর্মঘট করে ব্যবস্থাপককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে জোরপূর্বক বাগান থেকে বের করে দেয়। এর প্রেক্ষিতে ধলই চা-বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় ধলই চা-বাগানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ১৯ আগস্ট থেকে চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন পর ধলই চা-বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় সচল হওয়ায় তিনি (এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান) কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ১৯ আগস্ট সকাল ১১টায় তদারকি কাজে ধলই চা-বাগানে গিয়েছিলেন। ওইসময় চা-বাগানের ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বাগানের সকল কর্মচারীর জুলাই মাসের বেতন ও মজুরি পরিশোধের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান তিনি। তখন সকল আসামি লাঠি, লোহার রড নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে কোম্পানির জিপ গাড়ির (ঢাকা মেট্রো- ড-০৫-০০১৫) গতিরোধ করে। এ সময় ১নং আসামির হুকুমে বাকি আসামিরা গাড়ির কাচ ভাংচুর করে। আসামিরা তাকে (এজিএম) জোরপূর্বক টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে জখম করে। আসামিরা গাড়িতে ব্যাগের ভেতরে রাখা ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আসামিরা একটি নোহা মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যায়। পরে এজিএমসহ আহতরা মৌলভীবাজারের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
ওই ঘটনার দুইদিন পর শনিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- শিব নারায়ণ শীল (৫৫), তুলশী দাস মাদ্রাজী (৫০), পিংকা কালোয়ার (৫৫), অমৃত কুমার পাশী (৪৬), মো. ফরিদ আলী (৪৫), মো. ইরাজ আলী (২৭), লছমী ভর (৬০), সুদীপ্ত ভর (২৬),ভর (৬০), অজিৎ পাশী (২৫) ও দিপেন ভর (২৫)। মামলায় ১৪ নম্বর আসামিকে অজ্ঞাত রেখে আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার ১ নম্বর আসামি মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু জানান, ১৯ আগস্ট ধলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক অবরুদ্ধ বলে কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ও থানার ওসি মো. আরিফুর রহমানের নির্দেশে তিনি ধলই চা-বাগানে গিয়ে বিক্ষুদ্ধ চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশসহ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। এখন তাকে চা-বাগান কোম্পানি মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে ১ নম্বর আসামি করেছে।
মামলার ২ নম্বর আসামি চা যুব নেতা মোহন রবিদাস ও ১১ নম্বর আসামি চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন জানান, ঘটনার দিন সকালে ধলই চা-বাগান কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ মামলার বাদী খালেদ মঞ্জুর খান চা-বাগানের দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল মেরে জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছেন। এরচেয়ে বেশি কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন যাতে অনাহারে থাকা চা শ্রমিকদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দেওয়া হয় সেজন্য ঘটনার দুইদিন পর পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজানো হয়েছে। অথচ ঘটনার পর লাঞ্ছিত নারী চা শ্রমিকরা কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা সে অভিযোগ গ্রহণ করেনি।
এ সম্পর্কে জানতে মামলার বাদী ও ধলই চা-বাগানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক খালেদ মঞ্জুর খানের মুঠোফোনে কয়েকদফা ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই সিরাজুল ইসলামকে।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ১৯ আগস্ট অবরুদ্ধ ধলই চা-বাগান কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপককে উদ্ধার করতে মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানুকে নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল