স্পোর্টস ডেস্ক:-
মৃত্যু ঝুঁকির পাশাপাশি করোনার অর্থনৈতিক ধাক্কাও কিন্তু কম নয়। ক্রিকেট বিশ্বেও করোনার ঝাপটা লেগেছে। করোনায় সব বন্ধ। কোন সিরিজ, আন্তর্জাতিক সফর- কিছুই হচ্ছে না। এতে করে প্রায় সব ক্রিকেট বোর্ডকেই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা ইসিবি এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে
এক আইপিএল না হওয়ায় বিসিসিআইয়ের বড় অংকের ক্ষতি হবে। ভারতীয় গণমাধ্যম ‘বিজনেস টুডের’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইপিএল না হলে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩৭৫.৫২ কোটি টাকা ক্ষতি তবে বিসিসিআইয়ের। এর মধ্যে ৩৬৯৭.০৬ কোটি টাকা শুধু সম্প্রচার স্বত্ব থেকেই লোকসান হবে। ২২৬.১৫ কোটি টাকা হারাবে কেন্দ্রীয় স্পন্সরশীপ এবং ৪৫২.৩২ কোটি ক্ষতি হবে টাইটেল স্পন্সর হারানোয়।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও করোনার কারণে খরচ কমাতে বোর্ডের ৮০ ভাগ কর্মচারিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। ভারতের সাথে হোম সিরিজ না হলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে ৩০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতি গুনতে হবে।
ওদিকে ইসিবির অবস্থাও করুণ। করোনা ভাইরাসের বন্ধ হয়ে যাওয়া এবারের মৌসুম যদি আর শেষ করা না যায়, মানে যেসব খেলা হবার কথা ছিল, সেগুলো যদি শেষ পর্যন্ত এ বছর আর মাঠে না গড়ায়, তাহলে ইসিবি অন্তত ৪০০০ কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মত বিশ্বের তিন বড় ক্রিকেট শক্তি ও সমৃদ্ধ ক্রিকেট বোর্ড ওত বিশাল অংকের অর্থ ক্ষতির মুখে। তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির না জানি কি করুণ দশা হবে! একই সময় বিসিবির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কত? করোনার কারণে বিসিবির যে লোকসান হবে, টাকার অংকটা কত? বিসিবি কি সে ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে।
এ কৌতুহলী প্রশ্নর উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটা তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাহলো-করোনায় এরই মধ্যে কিছু ক্ষতি হয়েছে বিসিবির। এবং সামনেও হয়তো হবে। তবে সে ক্ষতিকে খুব বিশাল বা বড় কিছু মানতে নারাজ বিসিবির কর্তারা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পরিচালক ও অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান ইসমাইল হায়দার মল্লিকের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘হ্যাঁ, ক্ষতি তো হবেই। করোনার ধাক্কায় আমাদের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আয় কমে যাবে।’
সে কমতি বা লোকসানটা কেমন দাঁড়াতে পারে? এমন প্রশ্নে মল্লিকের জবাব, ‘আমাদের (বিসিবির) বোর্ডের হাজার হাজার কোটি টাকা আয়ও নেই। তাই হাজার কোটি টাকা ক্ষতিরও সম্ভাবনা নেই। আমাদের আয় খুব বেশি না। তবে আমরা আমাদের আলোকে অস্বচ্ছল নই। বরং বেশ স্বচ্ছল। তাই আমাদের খুব বড় ধাক্কা লাগবে বলে মনে হয় না। তবে এটুকু বলতে পারি আমাদের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ রেভিনিউ কমবে।’
সেটা টাকার অংকে কত? ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘আশা করছি ওরকম বড়সড় লোকসান হবে না। জার্সি স্পন্সর, গ্রাউন্ডস রাইটস, টিভি রাইট- এগুলোর মূল্য তো কিছু কমবেই। সেটা আমার হিসেবে ২০-২৫ শতাংশ। টাকার অংকে হয়তো ৩০-৪০ কোটি টাকার মত হতে পারে। এটা ঠিক, আমাদের ফান্ডে হয়তো অতিরিক্ত কোন টাকা গচ্ছিত থাকবে না। তবে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় আশা করি সমস্যা হবে না। আমাদের বোর্ডের সব কার্যক্রম আশা করি স্বাভাবিকভাবে চলবে।’
এদিকে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন মাস খানেক আগে জাগো নিউজের সাথে আলাপে জানিয়েছিলেন, বোর্ডের আয়ের যে সব বড় বড় খাত ও উৎস আছে, তার কোনটাই এখনও ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ হয়নি। এটা একটা বড় স্বস্তি। আগামী কয়েক মাসেও এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যা না হলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।
অর্থাৎ ধরে নেয়া যায়, যদি এশিয়া কাপ পর্যন্ত করোনার প্রভাবে ক্রিকেটীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকে, তাহলে বিসিবির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০-৪০ কোটি টাকার মত। তবে এর মধ্যে একটি ‘যদি-কিন্তু’ আছে।
বিসিবির এ বছরের সম্ভাব্য আয়ের দুটি বড় উৎস হলো এশিয়া কাপ আর বিশ্ব টি-টোয়েন্টি। ঐ দুই আসর বিসিবির এ বছরের অর্ধেক আয়ের সমান।
এমনিতেই বিসিবির আয়ের উৎস হলো দুটি। অর্ধেক আয়ের উৎস হলো বিভিন্ন স্পন্সর, টিভি স্বত্ব, জার্সি-টিম স্পন্সর ও বিভিন্ন হোম সিরিজ আয়োজন থেকে পাওয়া অর্থ। আর ৫০ ভাগ আয়ের উৎস হলো আইসিসি আর এসিসি।
এর মধ্যে কোন আইসিসি ইভেন্ট থাকলেই মোটা অর্থ প্রাপ্তি। সামনে সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ আর অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যেহেতু আইসিসি ও এসিসি ঐ দুই আসরের একটিকেও বাতিল ঘোষণা দেয়নি। তাই বিসিবিও আশায় আছে, এই দুই আসর হলে একটা ভালো অংকের অর্থ প্রাপ্তি হবে। তখন অন্য ছোট খাট ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।
কিন্তু যদি ঐ দুই আসর না হয়, তখন কিন্তু বিসিবির বছরের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আয়ের বদলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আয় কমে যাবে। অর্থাৎ এখন যে অংকটাকে ৩০ থেকে ৪০ কোটি মনে হচ্ছে, সেটা তখন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সোজা কথা, এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হলে বিসিবির আনুমানিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৬০ থেকে ৮০ কোটি টাকা।
তবে সেটাই শেষ কথা নয়। করোনা দীর্ঘায়িত হয়ে যদি এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাথে বিপিএলও না হয়, তাহলে কিন্তু বিসিবির ক্ষতি নেহায়েত কম হবে না। বিসিবির বর্ষ পঞ্জিতে ডিসেম্বরে বিপিএল হবার কথা। শেষ পর্যন্ত যদি বিপিএল না হয়, তাহলে বিসিবির আয়ের একটি বড় উৎস কমে যাবে।
বিপিএলের আগেরবারের আসরের কথা ভিন্ন। এমনিতে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর থেকে অন্তত ৫০ কোটি টাকার মত আয় হয় বিসিবির। সেটা না হওয়ার অর্থ অন্তত আরও ৫০-৬০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাওয়া। কাজেই বিপিএল না হলে বিসিবির এ বছরের অর্থ ক্ষতি শত কোটি ছাড়িয়ে সোয়া‘শ কোটির মত গিয়ে দাঁড়াতে পারে।