নিউজ ডেস্কঃ গাছে আচ্ছাদিত ছিল সিলেট বেতার। এখন বেতার বিরান ভূমি। উন্নয়ন কাজের নামে কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় সব গাছ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার দাবি- ইতিমধ্যে বেতারে কেটে ফেলা হয়েছে ১৪৩টি গাছ। এর মধ্যে বিক্রি করে কিছু গাছ সরিয়েও ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হওয়ায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া বেশি সংখ্যক গাছ কর্তন নিয়ে সিলেট বেতারের এই হুলুস্থুলের মধ্যে চলছে ৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। সিলেটের সংস্কৃতি কর্মীরা দাবি করেছেন- নামমাত্র কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে এরই মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।
বেশিসংখ্যক গাছ কর্তনের অভিযোগ ওঠায় এরই মধ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট সদরের সহকারী বন সংরক্ষক জিএম আবু বকর সিদ্দিককে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- হবিগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সিলেট রেঞ্জের ফরেস্ট রেঞ্জার দেলোয়ার হোসেন। আগামী দুু’-এক দিনের মধ্যে তারা সিলেট বেতারে তদন্তে যাবেন বলে জানান তিনি। এবং গলদ থাকলে আইনমতো সুপারিশ করা হবে বলেও জানান। সিলেট বেতারের আঞ্চলিক কেন্দ্রে নির্বিচারে গাছ কর্তনের ব্যাপারে যখন তোলপাড় চলছে তখনও চলছে প্রকল্পের কাজ। বেতারঘেঁষা সিলেটের সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনীতিবিদ প্রিন্স সদরুজ্জামান গতকাল অভিযোগ করেছেন- সিলেট বেতারের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের একটি স্বপ্নের প্রকল্প। অনেক দাবির প্রেক্ষিতে ওই প্রকল্পটি গ্রহণ ও টাকা ছাড় হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প প্রজেক্ট ও ওয়ার্ক অর্ডারের কাগজপত্র এখনো কেউ দেখেনি। এ কারণে প্রকল্পের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন- ইতিমধ্যে খবর এসেছে প্রকল্পের কাজের জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
কিন্তু দৃশ্যমান এক কোটি টাকার কাজও হয়নি। ফলে, এখানেও দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রজেক্টের টাকায় হচ্ছে এসি প্লান্টের কাজ। ওয়ার্ক অর্ডারে স্টিল সিট ব্যবহারের নির্দেশনা আছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে সাধারণ সিট দিয়ে। ঢালাই পিলারের পরিবর্তে নিম্নমানের ইটের পিলার। বক্সে ‘জং’ ধরেছে ইতিমধ্যে। তড়িঘড়ি করে এ কাজ করায় মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বেতার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- সিলেট বেতারে আগত দূর-দূরান্তের শিল্পীদের প্রয়োজনে পুরনো বেতার ভবনের নিচতলায় একটি ক্যান্টিন চালু ছিল। সিলেট বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মনোয়ার খান সেই ক্যান্টিনের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেন। ক্যান্টিনের পরিচালক তাকে নিয়মিত ও ফ্রি খাবার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পানি বন্ধের এই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় শিল্পীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন- সিলেট বেতারের গাছ কাটার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আর ৬৩ কোটি টাকার মধ্যে ৮ কোটি টাকা উত্তোলনের বিষয়টি সত্য নয়। আমরা ইতিমধ্যে সোয়া ৬ কোটি টাকার কাজ করছি। এর মধ্যে মেশিন ক্রয়ে এলসি’র জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- প্রকল্পের কাজে অনিয়ম হবে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সিলেট বেতার আধুুনিক ও উন্নত বেতারে পরিণত হবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট বেতারে এতো টাকার উন্নয়ন কাজ হলেও জানানো হয়নি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে। বিষয়টি সম্প্রতি স্থানীয় নেতারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানালে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে নেতারা জানিয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি জেলা প্রশাসকের উন্নয়নের তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।