সিলেটের কৃতিসন্তান, জাতীয় অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী ইন্তেকাল (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) করেছেন। আজ মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনেরও প্রধান পরিকল্পনাবিদ।তিনি জেআরসি স্যার হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্বজনরা সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। স্বজনরা জানান, গত রাতে ধানমন্ডির বাসায় জামিলুর রেজা চৌধুরী ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে সেহরির সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে ডাক দেন। কোনো সাড়া না পাওয়ায় তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। আজ বাদ জোহর জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। জামিলুর রেজা চৌধুরী সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রকৌশল জগতে সবার পরিচিত নাম। একাধারে গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী । তাঁর জন্ম সিলেট নগরীতে। জামিলুর রেজা চৌধুরীর
বাবা আর ভাইসহ পরিবারের অনেক সদস্যই প্রকৌশলী ছিলেন। বড় হয়ে তাঁর বাবা ও ভাইদের মতো তিনিও বেছে নেন এই পেশা। স্বাধীনতার পর এ দেশে যত বড় বড় ভৌত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই জামিলুর রেজা চৌধুরী কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে। হাত দেন পদ্মা সেতু নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞে। জামিলুর রেজা চৌধুরী একসময় যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ডাক পেয়েছিলেন বিখ্যাত আরেক বাংলাদেশি প্রকৌশলী এফ আর খানের কাছ থেকে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অবদানের জন্য সমাদৃত জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রায় ৭০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার আর সম্মাননা। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট স্বর্ণপদক, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে পাওয়া সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। একসময় বুয়েটে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৯৬-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও। উপাচার্য ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আর্থকোয়েক সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অনেক দিন ধরে। সিলেট সিটি কর্র্পোরেশনের উদ্যোগে ভূমিকম্প নিয়ে আয়োজিত বেশ কয়েকটি সেমিনারে তিনি বক্তৃতা করেন।