বিশ্বব্যাপী মহামারী নভেল করোনায় বিশ্ব যেখানে নিরব-নিস্তব্ধ, সেখানে সিলেটে প্রকাশ্যই চলছে ইফতারি দেওয়া-নেওয়া। সরকার নিষেধ করেছে ফুটপাতে ইফতারি ক্রয়-বিক্রয়। ফুটপাতে ইফতারি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ হয়েছে তো কি হয়েছে, দোকান তো খোলা আছে।
নভেল করোনায় সরকার যেখানে ফার্মেসি আর কাঁচামালের দোকান ব্যতীত সকল দোকান বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে মিষ্টির দোকান আর হোটেল খুলেই অবাধে চলছে ইফতারি ক্রয়-বিক্রয়।
গতকাল ১ম রমজানে স্থানীয় খাগাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যই চলছে ইফতারি বিক্রয়। দোকান একটা থাকায় গত রমজানের চাইতেও ভীড় অনেকটাই বেশি। সেটা দেখে বুঝাই যাচ্ছে না যে, বর্তমানে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব নিরব-নিস্তব্ধ।
বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের পাশে থাকা সালুটিকর বাজারে গিয়ে দেখা যায় একটি অভিজাত মিষ্টির দোকানের দরজার সাটার লাগানো। কিন্তু একজন বাইরে থেকে প্রটেকশন দিচ্ছে আর ভেতর থেকে আরেকজন। যেমন- গায়েবি ভাবে চলে আসছে মিষ্টি-জিলাপি। আর ক্রেতা বাইরে দাঁড়িয়ে।
এখানে দোকানদারের দোষ দিয়ে কি লাভ? তারা সুযোগ পেলেই তো তাদের দোকান খুলবে।
তারপর আসি যারা দিচ্ছে ইফতারি, তাদের কথায়- একজন বাবা যাচ্ছেন ইফতারি নিয়ে। জিজ্ঞেস করলে বলেন যে, মেয়ের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন ইফতারি। তখন বললাম যে, এই মহামারীর মধ্যে ইফতারি না দিলে কি হয়না? তিনি বলেন, মেয়ের আবদার। দিতেই তো হবে। তিনি বলতে চাইছিলেন না, জোর করার পর জানতে পারলাম যে এটা শুধু মেয়ের আবদার না। তার জামাইসহ শ্বশুরবাড়ির লোক নাকি মেয়েকে বলেছে ইফতারি নিয়ে যেতে গতবছরের মতো এবারেও। মেয়ে আর কি করবে। অসহায়ের মতোই বাবাকে বলেছে। বাবা ও ইফতারি যখন দিতেই হবে, তখন তো প্রথম রমজানেই দিয়ে দেই৷ সেজন্য আজ প্রথম রমজানেই দেয়া।
আরেকটা বিষয় নিজ চোখে লক্ষ্য করলাম। আমার পাশের বাড়ির একজন লোক এই মহামারীর মধ্যেই বিয়ে করেছেন। গতকাল প্রথম রমজানে বেলা ৯ টায় দেখতে পাই যে, তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এই সাজ সকালেই হাজির ইফতারি নিয়ে। আমরা সচরাচর যা দেখি তা হচ্ছে, বিকেল বেলা ইফতারি নিয়ে আসতে-যেতে। কিন্তু, তারা সাজ সকালেই হাজির৷ বিষয়টা অনেকটা খটকা লাগলেও- কথা হচ্ছে বিকেলে গাড়ি পাওয়া যাবে না আর পুলিশ আসতে দিবে না৷ আর মেয়ের বাড়ি প্রথম ইফতারি দিবেন না তা কি হয়!
সবকিছু বিবেচনা করে দেখা যায়, সিলেটের মানুষের সাথে ইফতারি অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত হয়ে গেছে। কেউ চাপে পড়ে আর কেহবা স্বেচ্ছায় দিচ্ছেন ইফতারি। এতে মহা বিপদে পড়ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। হয়তোবা বড়লোক পরিবারে দিয়েছেন মেয়ের বিয়ে। আর জামাইয়ের একটা সম্মান আছে না! অভিজাত দোকানের পণ্য না দিলে হবেনা আর সবকিছু যেনো থাকে এবং বেশি করে।
মধ্যবিত্ত পরিবার কিন্তু নিজ সম্মানের দিকে বেশি থাকায়। তাই, কষ্ট করে হোক আর ঋণ করে- দিতেই হবে মেয়ে বা বোনের বাড়ি বড় করে ইফতারি।
আর নিম্নবিত্ত পরিবারের কথা নাই বললাম।
এসব কুসংস্কার আর প্রথা থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে প্রথমে সকল শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে আর প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। রমজান আসলেই যদি সকল বাজারের মিষ্টির দোকান আর হোটেলে অভিযান দেওয়া হয়, তাহলে অনেকটাই কমে আসবে এ প্রথা। এ প্রথাটা কিন্তু সিলেটেই বেশি।
তাই, আগে নিজে সচেতন হই আর অন্যকে ও সচেতন করি।
লেখকঃ- লবীব আহমেদ।
কলেজ শিক্ষার্থী।