লবীব আহমেদঃ-
২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সকাল ৮টা ৪৫মিনিটে সাভার বাস স্ট্যান্ডের পাশে থাকা নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ভেঙে পড়ে। এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব-ইতিহাসেরই অন্যতম ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনা।
ভবনের কয়েকটি তলা নিচে দেবে যায়। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। এ দূর্ঘটনায় ১১৩৮ জন (সরকারি হিসাব মতে, ১১২৯ জন) শ্রমিক নিহত এবং আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় আর নিখোঁজ হয় ৯৯৬ জন যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন ব্যবহার করতে সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। তারপরও ভবন বন্ধ করা হয়নি। তার কিছুদিন পরেই ভবন ধসে পড়ে।
ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং আরো একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল।
সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ।
ইতিহাসের এত বড় একটি ঘটনা, কিন্তু একে কেন্দ্র করে করা মামলাগুলোর একটি ছাড়া বাকি প্রায় কোনটিরই আজ পর্যন্তও নিষ্পত্তি হয় নি।
ভবন ধসার কারণে মোট ১৪টি মামলা করা হলেও কেবল দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) সম্পদের তথ্য গোপন করা সংক্রান্ত মামলার রায় হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে অবহেলা-জনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন এবং নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর দায়ের করা খুনের মামলা।
ভবন নির্মাণের দুর্নীতি মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এটি কবে শেষ হবে? তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এর মধ্যে কেবল দুদকের ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচার চলছে ও রায় হয়েছে সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা। তবে ঝুলে রয়েছে হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলার কার্যক্রম।
অথচ রানা প্লাজার বিপর্যয়ের পরপরই ‘অবহেলা জনিত’ মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছিলো সাভার থানা পুলিশ। যাতে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও ওই ভবনের থাকা পোশাক কারখানার মালিকসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়।
ভবন ধসে পড়ার পর আকর্ষণীয় একটি ঘটনা হচ্ছে- এই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭দিন পর অর্থাৎ ১০মে রেশমা নামের এক মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।
রানা প্লাজায় যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবার আজ অসহায় অবস্থায় রয়েছে। আর যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের কাজ করার মতো সামর্থ্য নেই।
গতবছরের অ্যাকশন এইডের এক জরিপে উঠে এসেছে, ‘এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ৫১ ভাগ শ্রমিক এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে কাজ করতে সক্ষম নন’।
তাদেরকে সরকার থেকেও কোনো প্রকার সহায়তা করা হচ্ছে না৷ তারা কেমনে, কিভাবে বেঁচে থাকবে আর সংসার চালাবে- তা আল্লাহ বাদে আর কেউ জানেন না। বর্তমানে মহামারী করোনার কারণে দেশের অবস্থা খারাপ। আর তাদের ও। এ অবস্থায় কিভাবে তারা বেঁচে থাকবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- ‘রানা প্লাজায় নিহতরা কি তাদের বিচার পাবে না’?
পরিশেষে সরকারের কাছে একটি আবেদন-
যারা এ ঘটনায় দোষী, তাদের বিচার করা হোক। আর ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করা হোক।