শেখ রিদওয়ান হোসাইন
সাথে বিশ্বের সবাই কম-বেশি পরিচিত। আর টাইসুনের সাথে ব্যাটসম্যানরা! অসম্ভব রকম গতির ঝড় তুলেছেন মাঠে, আর হয়েছিলেন তৎকালীন ব্যাটসম্যানদের নাটম্যায়ার। তার নিকনেমটাও কিন্তু অসংখ্য ক্রিকেট বোদ্ধা দিয়েছেন ‘টাইফুন’।
একবার চিন্তা করেন,একটা বোলার কোনো রান-আপ না নিয়ে, শুধু নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়িয়ে গতি তুলেছে ১৪২kph! তাহলে উনি যখন দৌড়ে এসে বোলিং করতেন,তখন কি হতো? এটা তো চিন্তা করতেও ভয় লাগে!
তখনকার সময়ে বোলিং স্পিড মাপার জন্য কোনো যন্ত্র ছিলো না। তাই টাইসুনের গতির ঝড় মাপার জন্য ১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে আলাদা করে তার গতি পরীক্ষা করা হয়েছিলো। সেই তীব্র শীতের সকালে ৩ টি সোয়েটার গায়ে দিয়ে মেটাল প্লেস যুক্ত বল ও সনিক ডিভাইসের সাহায্যে তার বোলিংয়ের গতি মাপা হয়। কিন্তু শর্ত ছিলো জায়গায় দাড়িয়েই বল ছুড়তে হবে! আর তুলে ফেললেন ১৪২KPH! অবিশ্বাস্য!
নর্থয়াম্পটনশায়ারের উইকেট কিপার কেইথ এন্ড্রোস পুরো ৭২ গজ দূরে থাকতেন যখন ‘টাইফুন’ অর্থাৎ টাইসুন বোলিংয়ে থাকতেন। কিছুটা তো আন্দাজ করতেই পারছেন তাহলে যে তিনি কতটুকু পেস জেনারেট করতে পারতেন!
১৯৫৩ সালে ক্লাবের হয়ে একটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের স্টাম্প এমনভাবে তুললেন যে স্টাম্পটি উইকেট কিপারের মাথায় উপর দিয়ে চলে যায়। লিখাটি পড়তে পড়তে আপনি এই দৃশ্য কল্পনা করতে থাকবেন স্বাভাবিকই। তারপর ইংল্যান্ডের হয়ে এ্যাশেজে প্রিয় রাইভালদের এক কথায় গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। সিডনিতে ১৩০ রান দিয়ে ১০ উইকেট, ৯৫ রান দিয়ে ৯ উইকেট ও মেলবোর্নে ২৭ রানে ৭ উইকেট নিয়ে আনুষ্টানিকভাবেই যেনো খেতাব পান ‘টাইফুন’ নামে!
জিএম কিলবার্ন তাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন,”তাঁর সেরা গতি ব্যাটসম্যান এবং দর্শকদের কাছে চমকে দেওয়ার মতো কম ছিল না। তিনি তার কৌশলটির বিবরণকে অস্পষ্টকারী একটি মৌলিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাঁর হাত থেকে ছোড়া বল দর্শকদের শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো দ্রুত দূরের উইকেটকিপারের হাতে চলে যেতো।”
ইংল্যান্ডের এই বোলার মাত্র ১৭ টি আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলে তুলেছেন ৭৫ টি উইকেট যেখানে গড় মাত্র ১৮.৫৬। সেই ঐতিহাসিক ১৯৫৪-৫৫ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া সফরেই তুলেছিলেন ২৮ উইকেট মাত্র ২০.৮২ গড়ে। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৭ সালে এসে, উইজডেনের ১৯৫৫ সালের ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ারে ভূষিত হন টাইসুন।
এ্যাশেজ জয়ের পরে নিউজিল্যান্ডের সাথে একটি টেস্টে দুনেদিনে নিউজিল্যান্ডকে একেবারে গুড়িয়ে দেন এই বোলার। প্রথম ইনিংসে ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। আর ইংল্যান্ড সহজেই ৮ উইকেটের জয়ও পেয়ে যায়।
“টাইসুন তার সেরা সময়ে সর্বকালের সেরা গতিশীল বোলার। ১৯৫৪-৫৫ সালের সেই অস্ট্রেলিয়া সফরে ইংল্যান্ড অজিদের তাদের নিজেদের মাটিতেই ধরাশায়ী করতে থাকে যার পিছনের কারণ ছিলেন টাইসুন। লাম্বা রান-আপের গর্জন দিয়ে সে অসাধারণ গতি তুলতো যার কারণে গ্রেটেস্ট ব্যাটসম্যানরাও তাদের কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলতো। আমি বিশ্বাস করি না তারচেয়ে দ্রুত গতির বোলার কেউ ছিলো”__ টম গ্রেভেনি।
সর্বশেষে বলে যাই,বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে যাকে ধরা হয়,সেই স্যার ডন ব্রাডম্যানের উক্তিটি-
“দ্যা ফাস্টেস্ট বোলার বোলার আই’হেভ ইভার সিন”!