পাঁচ কেজি চালের সঙ্গে একটি পাকা লাউ— সরকারি ত্রাণ! ত্রাণসামগ্রীর এমন শ্রী দেখে হতভম্ব হয়ে খালি হাতেই ফিরে গেছেন অসহায় দুস্থ অনেক মানুষ। অনেকে আবার ক্ষোভ সামাল দিয়ে বাধ্য হয়ে নিয়েছেন সেই ত্রাণসামগ্রী।
সরকারি ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে চালের সাথে লাউ বিতরণের এ ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায়।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সকালে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে সরকারি এই ত্রাণ সহায়তা অসহায় দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ত্রাণসামগ্রী হাতে পেয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকেই হতভম্ব হয়ে গেছেন। কেউ কেউ রাগে-ক্ষোভে ত্রাণ না নিয়েই বাড়ি ফিরে গেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দাবি— জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এভাবেই প্রতিটি ইউনিয়নে ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে।
গ্রামের রাস্তায় গরুকে ত্রাণের লাউ খেতে দিয়ে চালের ছোট প্যাকেটটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন অনেকেই। তাদের কয়েকজন জানান, এই দুর্যোগের সময় সরকারের পক্ষ থেকে এমন ত্রাণ পেয়ে কিছু বলার ভাষা নেই! শুধু পাঁচ কেজি চাল আর একটা লাউ দিয়ে কী হবে? এগুলো দিয়ে কতদিন সংসার চলবে? এটা যদি সরকারের ত্রাণ হয় তাহলে ঘরে থেকে লাভ কী?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শতগ্রাম ইউনিয়নের এক ব্যক্তি বলেন, পাঁচ কেজি চালের সাথে যে লাউ দিছে সেটা খাবার জো নাই। রান্না করার জন্য কেটে দেখি নষ্ট। লাউ বাত্তি হওয়ায় গরুকে খেতে দিয়েছি। এগুলা বলাও যায় না। নাম প্রকাশ হয়ে গেলে পরে আর অনুদান পাব না।
মোহনপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম এমন ত্রাণসামগ্রী দেখে হু হু কাঁদতে কাঁদতে চলে যান। তবে তার প্রতিবেশী ফরজ আলী ত্রাণ নিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, একটা লাউ, পাঁচ কেজি চাল, এটা কেমন ত্রাণ? ত্রাণের নামে তামাশা!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীরগঞ্জের শতগ্রাম, মোহনপুর ও পাল্টাপুরসহ এগারোটা ইউনিয়নে শুক্রবার একই রকম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আর এই চাল-লাউ বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাব্বির নামে এক বাসিন্দা বলেন, কত আশা নিয়ে গেলাম। ভাবলাম চাল-ডাল-তেল দেবে। কিন্তু হাতে দিল পাঁচ কেজি চাল আর এক পাকা লাউ। পাঁচ কেজি চালের প্রতি প্যাকেটে ৩০০ গ্রাম করে চাল কম দেওয়া হয়েছে। বাসায় এসে চালের প্যাকেট ওজন দিয়ে দেখি এমন কাণ্ড!
এ ব্যাপারে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মজিদুল ইসলাম কে বলেন, শুধু আমাদের ওয়ার্ড বা এই ইউনিয়নে নয়, পুরো উপজেলাতেই একই হাল। আমার ওয়ার্ডে ৬শ’ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছি। সেখান থেকে মাত্র ৩৭৫ জনের নাম রাখা হয়েছে। আজ শুধু ৩০ জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের ধাপে ধাপে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, পুরো ইউনিয়নে ৩৯০০ জন এমন ত্রাণ সহায়তা পাবেন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোর চাহিদা বিচারে এই ত্রাণসামগ্রী নগণ্য। এত কম বরাদ্দ নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়াটা মুশকিল।
মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিদুল ইসলাম মাস্টার বলেন, জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে তাকে ৪০০ জনের জন্য পাঁচ কেজি করে চাল ও একটা করে লাউ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই ৪শ’ জনের মধ্যে ৪৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দিষ্ট কিছু দলীয় লোক রয়েছেন। বরাদ্দ সামগ্রী সকালে অসহায় দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেছি। বিতরণের সময় একটা লাউ নষ্ট বের হলে সেটা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।