নিউজ ডেস্ক:-
‘কোভিড ১৯ যুদ্ধের প্রথম শহীদ ডা. মঈন সমগ্র বাংলাদেশ তোমাকে অবনত চিত্তে কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। এ যুদ্ধে তুমি আমাদের শক্তি আমাদের প্রেরণা। খোদা তোমাকে পুরস্কৃত করুন।’ ডা. ইকবাল আর্সেনাল, সভাপতি স্বাচিপ।
‘ডা. মঈনের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত কিন্তু সংক্ষুব্ধ’-অধ্যাপক (ডা.) মনজুর হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।
‘একজন ভালো মনের মানুষ ও গরীবের ডাক্তার নামে পরিচিত ডা. মঈনের বেদনাদায়ক মৃত্যুতে সিলেট বিএমএ ও সিলেট স্বাচিপ পরিবার গভীর সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করছে’– অধ্যাপক ডা. রুকন উদ্দিন।
‘ডা. মঈন উদ্দীন তুমি যে ভুল পলিসির বলি কেউ আজ তা বলবে না। ক্ষমা করো ভাই। ’– ডা. আবুল কালাম চৌধুরী, সার্জন, বিএসএমএমইউ
ডাক্তার মঈনকে যখন তার নিজের এম.এজি ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হলো না তখন বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকামুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সংবাদপত্রের খবর ও সিলেটে অবস্থান করা মঈনের সহকর্মীদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায় একটি এয়ার এ্যাম্বুলেন্স বা হেলিকপ্টারের জন্য অনেক চেষ্টা করেও তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের একজন এসিল্যান্ডের জন্য তড়িৎ গতিতে এয়ার এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হয়। তাহলে একই রাষ্ট্রে দ্বৈত নীতি কেন?
ডা. মঈন নিজে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- সিলেটে থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য একটি আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স এর জন্য কেউ কি ব্যবস্থা করতে পারবে। কেন তাকে এই ব্যবস্থার জন্য আবেদন জানাতে হবে। কর্তৃপক্ষ কি করলো। তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন!
‘হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা আইসিইউতে রাখার মতো খারাপ ছিল না। অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পর তার অবস্থা স্বাভাবিকই ছিল। যেহেতু এখানকার আইসিইউ নতুন, আর ওসমানী মেডিকেলের আইসিইউ অনেকদিন ধরে সচল; তাই তিনি প্রথমে সেখানে যেতে চান। কিন্তু সেখানে তাকে ভর্তি না করতে পারায় তিনি ঢাকায় যেতে চান।’ (দি ডেইলি স্টার, ১৬, এপ্রিল ২০২০) এ খবর থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালের যে আইসিইউর কথা বলা হয়েছে তাতে কোন সমস্যা ছিল অথবা তা অপারেট করার মত দক্ষ কেউ ছিলেন না বিধায় ডা. মঈনের বাধ্য হয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হতে হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডা. মঈন উদ্দিন (৪৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তাকে ছাতক উপজেলার খুরমা উত্তর ইউনিয়নের নাদামপুর নিজ বাড়িতে পিতা-মাতার কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
ডা. আবুল কালাম চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেন ‘ডা. মঈন উদ্দীন তুমি যে ভুল পলিসির বলি কেউ আজ তা বলবে না। ক্ষমা করো ভাই।’ তা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। যে অন্যদের জন্য অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে তার জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি? অথচ দুটি অবুঝ শিশুর কাছ থেকে অসময়ে তাদের বাবাকে কেড়ে নিয়ে এতিম করার রাস্তাটি সুগম করলাম!
তবে ডা. মঈন উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক আতিকুল হক। ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস দিয়ে এই হত্যার প্রতিবাদ জানান তিনি। এই লেখা দিয়েই ডা. মঈনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ডা. আতিকুল হকের স্ট্যাটাসটি এখনে তুলে ধরা হলো :
‘ডা. মঈন এর মৃত্যুতে আমি কোনো শোকগাথা লিখব না। কারণ, হত্যাকাণ্ডের কোনো শোকগাথা হয় না। হয় প্রতিবাদ। আমি এই হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গতকাল ডাক্তারদের সবচেয়ে বড় গ্রুপে পোস্ট দিয়ে তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হয়েই বলছি, উপজেলা, জেলা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এমনকি করোনা ডেডিকেটেড কোনো হাসপাতালেই পর্যাপ্ত পিপিই দেওয়া হয়নি। যা দেওয়া হয়েছে, তাকে খুব বেশি হলে রেইনকোট বলা যায়। দেশের কোনো হাসপাতালে N95 মাস্ক দেওয়া হয়নি। প্যাকেটের গায়ে N95 লিখে যেই মাস্ক দেওয়া হয়েছে, তা যে শপিং ব্যাগের কাপড় কেটে বানানো। তা এর আগে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের যারা এগুলো সাপ্লাই দিয়েছেন, তারা সবাই প্রতিটা চিকিৎসাকর্মীকে সুইসাইডাল মিশনে পাঠিয়েছেন। তাই প্রতিটা মৃত্যুর দায় আপনাদের।
আমি জানি এসব লেখার কারণে আমি শাস্তি পেতে পারি। দেন শাস্তি। কারণ, ওই একটা কাজই আপনারা ভালো পারেন। আর যারা এই সংকটেও পোস্ট পদবি ধরে রাখার জন্য নিজ সহকর্মীদের মৃত্যু দেখেও চুপ থাকছেন, আপনারা কেউই ভাইরাস প্রুফ না। আপনাদের জন্য সমবেদনা।’
আরেকটি স্ট্যাটাসে এই চিকিৎসক লেখেন, ‘চিন্তা করে দেখলাম, ডা. মঈন একদিক থেকে ভাগ্যবান। সবাই অন্তত উনার নামটা জানতে পারছেন। যদিও তাতে উনার বা উনার পরিবারের কিছু যায় আসে না। যার যায় সেই বোঝে। কিন্তু এরপরে যে চিকিৎসাকর্মীদের মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে (যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা আছে তার ভিত্তিতে বললাম), তখন আর নামটাও কেউ খেয়াল করবে না। তখন হিসাব হবে শুধু সংখ্যায়। আজ এতজন, কাল ততজন, এইভাবে। ২১৯ কে কেউ কেউ ভুলে ২০১৯ ও বলে ফেলতে পারে। ’
শাহাবুদ্দিন শুভ