যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার পর এবার দেশটিতে ধর্মীয় আশ্রয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী প্রিয়া সাহা।
জানা গেছে, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রিয়া। নিউ ইয়র্কে তার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে,ঢাকায় ফিরলে তাকে গ্রেফতার বা হয়রানির বদলে সরকার নিরাপত্তা দেবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় আশ্রয়ের জন্য আবেদন করবেন প্রিয়া সাহা।
বর্তমানে নিউইয়র্কে ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন প্রিয়া সাহা। আপাতত গণমাধ্যমকর্মী কিংবা অপরিচিত কারোর সঙ্গেই দেখা করছেন না তিনি। এমনকি ফোনে কথা বলতেও নারাজ। জাতিসংঘের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে প্রিয়া সাহা তার বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রিয়া সাহা। শুধু তাই নয় তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগও করেছেন তিনি। এসব ঘটনায় মুসলিম মৌলবাদীরা জড়িত বলে দাবি করেছেন প্রিয়া।
তার এই বক্তব্যে দেশে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠে। রাজনৈতিক মহলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার আখ্যাও দেওয়া হয়। প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে প্রমাণিতও হয়। তার এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, প্রিয়া সাহা তার নিজ বাড়িতে নিজেই আগুন দিয়েছেন এবং এখন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলেছেন।
এসব সমালোচনার মধ্যেই প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরে আদালত সেটিকে খারিজ করেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রিয়া সাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করতে নির্দেশ দেন।
প্রিয়া সাহার বিষয়ে তার সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলনে করে দলের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত জানান, প্রিয়া সাহা সংগঠনের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এটি সত্যি, তবে সাংগঠনিক কোন সিদ্ধান্ত বা দায়িত্ব নিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাননি বা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। যা করেছেন নিজের দায়িত্ব নিয়ে করেছেন। এর সঙ্গে সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের কাছে বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক ‘ডিজএপিয়ার’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। ‘ডিজএপিয়ার’ বলতে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা তিনি-ই ভালো বলতে পারবেন। এটি যদি স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের গুম বা নিখোঁজ অর্থে বলে থাকেন তবে তা অসত্য এবং আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।