মো.সাইফুর রহমান
যতো দূর চোখ যায় কেবল সারি সারি সাদা পাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল, উপরে নীল আকাশ আর দূরে সবুজ পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। যেন প্রকৃতি তার সবটুকু দিয়ে মেলা সাজিয়েছে। সব মিলিয়ে শিল্পীর তুলিতে আকা এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের ক্যানভাস।
বলছি সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামের কথা। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরত্বে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় এর অবস্থান। ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্নাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা আবার অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের রুপের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ।
ধলাই নদীর উৎস মুখের পাথর বেষ্টিত জায়গাটুকু জিরো পয়েন্ট বা সাদাপাথর নামে পরিচিত। সাদাপাথর এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মতো। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে চারপাশ ঘুরে আবার মিলিত হয়েছে। ধলাই নদীর পানির সাথে ভারতের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে প্রচুর পাথর নেমে আসে। পাথর উত্তোলনকে সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মান করা হয়। ভোলাগঞ্জ থেকে ১১ মাইল দীর্ঘ এই রোপওয়ে চলে গেছে ছাতক পর্যন্ত যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে রোপওয়ে টাওয়ারগুলো কালের স্মৃতিচিন্হ বয়ে বেড়াচ্ছে। রোপওয়ে বন্ধ হলেও থেকে নেই পাথর উত্তোলন। এখনো অনেক স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার প্রধান উৎস এই পাথর উত্তোলন। ১০ নং ঘাট থেকে সাদাপাথর যাওয়ার পথে পাথর তোলা কিংবা ছোট ছোট নৌকায় পাথর বহন করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আপনার চোখ জোড়াবে।
ভোলাগঞ্জ সীমান্তে একটি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন রয়েছে। যাতে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চুনাপাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সাদাপাথর এলাকার পাশেই আরো দুটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা উৎমাছড়া ও তুরুৎছড়া নামে পরিচিত। যদিও বর্ষকাল ছড়া বাকি দুই স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তবে শীতকালে সাদাপাথর সৌন্দর্যের অপরুপ চাঁদরে নিজেকে আবদ্ধ করে।
সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দুরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। দেশের যেখান থেকেই ভোলাগঞ্জ যেতে চান আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে ভোলাগঞ্জ যাওয়া যায়। বর্তমানে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার রাস্তার অবস্থা অনেকটা ভালো।।