ইসমাইল হোসাইন:
সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নিকটে মেঘালয়ের পাদদেশে সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাঁশতলা জুমগাও। প্রকৃতির হাতছানি পর্যটকদের হৃদয় কেড়ে নেয়। প্রশান্ত মনকে শান্ত করতে, প্রকৃতি প্রেমিকরা সেখানে উপচেপড়া ভিড় জমায়। বয়সের তোয়াক্কা না করে সব বয়সের মানুষ সেখানে অবসর সময় কাটায়। লোকেরা পড়ন্ত বিকেলে উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে দিক-দিগন্ত থেকে ছুটে আসে প্রকৃতির মজনুরা। দোয়ারাবাজার বাঁশতলা জুমগাও, যেখানে মঙ্গোলীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত গারোদের আবাসস্থল। যদিও জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে কতিপয় গারোরা নিজেদের মান্দি বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। গারোদের পাশাপাশি মুসলিম জাতীরও বসবাস চোখে পড়ে জুমগাও (টিলা) পাহাড়ে। উপরে উঠতে চোখে পড়ে, দৃষ্টিনন্দন মন জুড়ানো কংক্রিটের সিঁড়ি। একপা, দুপা করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় জুমগাও পাহাড়ের চূড়ায়। যেখানে আদি গোষ্ঠী উপজাতি মান্দিদের বসবাস। উঁচু-নিচু টইটম্বুর পাহাড়ে তাদের বেড়ে ওঠা। আকাশ ছুয়া হরেক রকম ভিন্ন জাতের, গাছগাছালি যেন, শুনশান করে বাতাসের সাথে কথা বলছে। দুদিক থেকে মোলায়ম সংস্পর্শে, জুমগাও পাহাড়কে আগলে রেখেছে প্রতিবেশীর আকাশছোঁয়া পর্বতমালা। পাহাড়ের গায়ে গায়ে মাটি থেকে একটু উঁচু করে নির্মিত বাড়িঘর, পাখপাখালির কলরবে মুখরিত চারদিক, হাজার রঙের ফুলের মাতাল গন্ধ, কোথাও বা ডাহুকের আনাগোনায় মুখরিত। পাহাড়ের এমন নান্দনিক পরিবেশ অন্য যেকোন জায়গা থেকে আলাদা। পাহাড়ের প্রকৃতির সান্নিধ্য মানুষের মনকে ¯িœগ্ধ করে তোলে। বৃষ্টির ফোঁটায় সবুজের স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ করে রেখেছে পাহাড়ি প্রকৃতি। প্রকৃতির সবুজ চাদর মোড়ানো বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ বেয়ে ওঠা সত্যিই রোমাঞ্চকর।
গারোদের মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম, ওয়ানগালা। গারোদের আধি ধর্মের নাম সাংসারেক। খাদ্যাভ্যাসে হাঁস, ছাগল, শুকর ও মদ তাদের অন্যতম পানীয়। পোশাক-পরিচ্ছদে রয়েছে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য। সুতা কেটে তারা ঘরের মধ্যেই কাপড় বুনিয়ে ব্যবহার করে। দকমান্দা নারীরা ব্যবহার করতে পছন্দ করে। রঙ্গিন কাপড়ও তাদের অধিক পছন্দের। পুরুষেরা ধূতি ও লেংটি পরিধান করে। বাঁশতলা জুমগাও মরিয়া হয়ে দেখতে আসে দর্শনার্থীরা যদিও সড়কের বেহাল অবস্থা।
ব্রিটিশ আমল হতে দোয়ারাবাজারের সড়ক, একেবারে চলাচলের অনুপোযোগী। এদিকে বাংলাবাজার হয়ে ছাতকের একমাত্র রাস্তাও যুদ্ধবিধ্বস্ত সড়কের মত। যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। একজন প্রকৃতি পিপাসু আগন্তুক বলেন, রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে- আমাদের প্রাণ যায় যায়, আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে। ভারী জান চলাচল করা থাক দুরের কথা, সামান্য ভ্যান চলাচলেই ঝুঁকি রয়েছে। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। জনজীবন সড়কের জরাজীর্ণতার কারণে চরম বিপাকে। সড়কের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত। প্রধান সড়কের দু’পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সড়ক সংকীণ পড়েছে। কোথাও কোথাও রড মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্যান চালক মজিদ মিয়া আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, পরিবারের তাগিদে ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়, কিন্তু সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ভয়- আতঙ্ক সর্বদাই মনে কাজ করে, না জানি কখন কি হয়